চম্পুকাব্য
শীত নামে আর বিকালবেলার চারা বিছরা আমাদের মন টানে। আমরাও দল বেঁধে হরতন-রুইতনের প্রেমে
পড়তে চাই। পুবের
বিলে রাত জেগে শুনতে চাই মালজোড়া, পীরমুর্শিদী গান। এতসব আমরা পারি না। গার্জিয়ানদের কড়া নজর আমাদেরকে
কান ধরে পড়ার টেবিলে বসায়। আমরা ‘যে জন দিবসে মনের
হরষে’ জপতে জপতে গলায় রক্ত তুলি।
কিন্তু এতেসব সুজা ভাই পারে। আর পারে বলেই সে হিরো হয়। দক্ষিণ পাড়ার কমলা আপার
প্রেমে সে ফানা হয়, কিন্তু সফল হয় কি না আমরা তা বুঝতে পারি না। আমরা দেখি কমলা আপার হঠাৎ
বিয়ে হয়ে গেলে গাঞ্জা খেয়ে সুজা ভাই পাড়ার টং দোকানে হৈ চৈ করে, আর ঝিম মেরে থাকে।
একদা আমরা বিদ্যালয়ে যেতে এও দেখতে পাই আমাদের হিরো সুজা ভাই
চৌরাস্তায় ট্রাফিক কন্ট্রোলে ব্যস্ত। জগতের এত এত যানবাহনের নিয়ন্ত্রন তার
আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যেতে থাকলে দিন শেষে আমাদের সুজা ভাই গ্রামে ফিরে
রাত পাহারায় নিয়োজিত হয়। আমরা তখনও সুর করে পড়তে থাকি : ‘কাঁটা হেরি ক্লান্ত
কেনো কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে’?
২
আর ভাবি, একদিন মক্তবঘাটের সবাইকে শুনিয়ে ঠিকই পাড়ায় পাড়ায় গল্প
হয়ে উঠব। তখন
হয়তো আশ্বিনের শুরু। দূরে তাকালেই সন্ধ্যার গায়ে কুয়াশা জমতে দেখা যাবে। হয়তো তখন আশ্বিনের শেষ। পুবের বিলে হলহলা ধানক্ষেত
ভিজে উঠবে গোধূলি আলোয়। আমরা শুকনো আলের ধারে বসে বসে হিমশীতল ধানগাছগুলো ছুঁয়ে দেবো
উচ্ছলতায়, কুয়াশানামা সন্ধ্যায়। না-হয় তখন ভাদ্রই হলো। রোদবৃষ্টির উমতানিতে ঘেমে
উঠবে পড়তি বিকেল। সোনা
ঝরা চান্দিনা ক্ষেতে উড়ে বসবে গোয়ালগাদ্দা ফড়িং। হয়তো বা পৌষের বিকেল। শিম ঝাড়ে ফুটে আছে ফুল, কুয়াশা কুহক। চৈত্রও তো হতে পারে। শিমুলের ডালে শালিকগুলো
ঝরাবে আগুন। বারিষাও
হতে পারে। চেনাজানা
পানাফুল, জারুলের গাছ, বিলের শালুক, হিজলের ডাল, পদ্ম ফোটা ঝিল হঠাৎ করেই অচেনা হয়ে
যাবে। অঝোর
ধারায় না-হয় ঝরলো বৃষ্টি সাতদিন। মাঘও তো হতে পারে। হোক। নাড়ার আগুনে ওম নিতে নিতে
পড়ব, পড়তেই থাকব। জলছাপ দেওয়া পাতায় লিখবে সে ‘যদি হয় সুজন,
তেঁতুল পাতায় ন’জন। যদি থাকে ভালোবাসা, এক বালিশে দুই
মাথা’।
ভাবি, একদিন পাবই সে-চিঠি,
প্রেমপত্র, গোপনীয় ডাক, নিষিদ্ধ কামনা।
No comments:
Post a Comment