• গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় ও তুষ্টি ভট্টাচার্য
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - সোনালী চক্রবর্তী
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।

  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস
  • ধারাবাহিক উপন্যাস


    বঙ্কিমচন্দ্র


    অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত

Wednesday, September 28, 2016

বিভাস রায়চৌধুরী

‘বাক’ পত্রিকার তরফ থেকে কবি বিভাস রায়চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছেন তুষ্টি ভট্টাচার্য। 



তুষ্টি ভট্টাচার্য -  ‘কবি হিসেবে আপনি তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। সকলের প্রিয় বিভাসদা’ – যদি বলি স্বীকার করবেন? নিজেকে জনপ্রিয় ভাবতে পারেন কখনও?

বিভাস রায়চোধুরী - জনপ্রিয় বলে কিছু হয় না ওটা বিজ্ঞাপনের ভাষা বিক্রেতা সব সময়ই বলতে চাইবে আমি যেটা এনেছি, সেটি গুণমানে অদ্বিতীয়, জনপ্রিয়, স্থায়ী ইত্যাদি ছোট্ট হলেও কবিতার একটা বেচাকেনার জগৎ আছে কাব্যগ্রন্থের প্রকাশক যেই হোন, পেশাদার প্রকাশন সংস্থা বা কবি বা কবিবন্ধু, কিছু অর্থ বিনিয়োগ করতেই হয় এবং কাব্যগ্রন্থ বিক্রি করেই সেই অর্থ আনতে হয় ঘরে বড় প্রকাশনী, ছোট প্রকাশনী সবাইকেই একই পথ ধরে চলতে হয় কিছু কবি দেখেছি নিজের কাব্যগ্রন্থ নিজেই প্রকাশ করেন, পরিচিত মণ্ডলে বিক্রি করেন পেশাদার সংস্থা প্রচারে ব্যবহার করেন 'জনপ্রিয়', 'বিশিষ্ট' এইসব বিশেষণ ক্ষুদ্র পুঁজির প্রকাশকরা বা স্বয়ং কবি তৈরি করেন নিজস্ব 'মার্কেট', সেখানে 'জনপ্রিয়' জনপ্রিয় নয়, বদলে ব্যবহৃত হয় 'আপসহীন' ইত্যাদি বিশেষণ এসব বিক্রেতার দিক থেকে প্রচারিত হয়, তাই বিশেষণগুলির উদ্দেশ্যও বোঝা যায় 
    কবিতার দিক থেকে ভাবলে দেখা যায় যে, কবিতা বিষয়টাই সমাজপ্রিয় নয় সামান্য বিক্রি হয় বলে পেশাদার লগ্নিকারীরা কবিতার বইয়ের পেছনে টাকা ঢালেন না বাজারসভ্যতার যা নিয়ম এভাবে প্রতি পদে উপেক্ষিত হলেও সাহিত্যের ইতিহাসে কবিতা গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবীজ হিসেবে ভাষানদীর চোরাস্রোত হিসেবে অধিকাংশ কবিই জীবন নষ্ট (পুনর্নির্মাণ??) 'রে ফেলেন এই কাজে তবু কেন যে এত কবি কবিতা লেখেন, তার কারণ আমি খুঁজে পাই না অন্যকে বলব কী, আমি নিজেই কেন আজো কবিতা লিখি, বুঝতে পারি না নতুন প্রজন্মের কিছু ছেলেমেয়ে যে আমাকে ভালবাসে, তার কারণ কবিতা নয় তার কারণ ওরা চিৎকার করে, কাঁদে, গালাগাল দেয়, মহান সাজে; আর আমি কিচ্ছুটি মনে-না-করে ওদেরকে দিই আমার অভিজ্ঞতা জনপ্রিয়তার প্রশ্নই আসে না, ওদের কাছে আমি বিশ্বাসযোগ্য হতে চাই

তুষ্টি - এই মার্কেটের নিরিখে কিছু কবি বা লেখক তবুও জনপ্রিয় হন। অনেক সময়েই দেখা যায়, তাঁদের অনেক সাধারণ লেখা জনপ্রিয় লেখক/কবি হওয়ার সুবাদে মুখে মুখে ফিরছে। তো, এই যে জনপ্রিয়তার একেকটি ব্র্যাণ্ড তৈরি হচ্ছে, আর তার মার্কেটিং হচ্ছে জোরকদমে, সাহিত্যের প্রাপ্তি হচ্ছে কিছু এতে? বাজার সভ্যতার অবদানে সাহিত্য বেঁচে যাবে বলছেন?

বিভাস - তোমার প্রশ্নটা আসলে একটি দৃষ্টিকোণ যা নির্দেশ করেছ তা সত্যি হয়তো, কিন্তু অধিকাংশ কবি ও কবিতা (পশ্চিমবঙ্গে) এই দৃষ্টিকোণের বাইরে নগরের হাতে প্রচারযন্ত্র, পুরস্কার, সিলেবাস কমিটি এইসব ক্ষমতাবৃত্তের চারপাশে জটলা যারা এসব ভালবাসে ভালবাসুক কিন্তু কবিতার সাধনা বা চর্চার জায়গাটাই আসল সেই অতলে ডুব দিয়ে তুলে আনতে হবে সারাৎসার

তুষ্টি - আপনার কথার সূত্র ধরেই বলছি, এই যে এত এত কবিতা লেখা হচ্ছে, এত নতুন কবি ‘তৈরি’ হচ্ছেন, কেন লিখছেন তার কারণ অনুসন্ধান নাহয় নাই করলাম, কিন্তু সত্যিই কি নতুন কিছু লেখা হচ্ছে? কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার দলিল হয়ে যাচ্ছে না কি এখনকার কবিতা? যে নতুনদের আপনি আপনার অভিজ্ঞতা দেন, তাঁদের কথা, তাঁদের লেখালেখির কথা কিছু বলুন।

বিভাস - তাড়াহুড়ো করলে মনে হতে পারে কিছুই হচ্ছে না কবিতা কেন লেখে মানুষ তা আমার কাছে বিস্ময়ের আমার ভাবনাটা নেতিবাচক নয়, স্বেচ্ছায় নিঃস্ব হতে চাওয়া মানুষদের প্রতি আশ্চর্য অভিবাদন রেখেছি দুই'একজন নয়, কবিতার বড় জগতে অজস্র পতঙ্গ ঝাঁক বেঁধে উড়লেও প্রত্যেকের পরিক্রমা আলাদা চর্যাপদ থেকে তুষ্টি ভট্টাচার্য --- এই যে প্রবহমানতা, সেখানে বিস্মৃত বা স্বল্পশক্তির কবিদের অবদানও রয়েছে সাহিত্যের ইতিহাসের বাঁকগুলো কিন্তু চমক চমকপ্রদ বলেই সহজে স্মরণীয় মনে রাখতে হবে অনেক ক্ষেত্রেই চমকগুলি মৌলিক কিছু নয় বলতে চাইছি কবিতা পরিকল্পনা অসম্ভব... সে শ্রেষ্ঠও নয়, নিকৃষ্টও নয়... কবিতা কেবলই সত্যি তাই আমার কাছে যে নবীন পতঙ্গেরা মাঝে মাঝে আসে তাদের বলি, আরো দাও কবিতাকে....বাঁচো আর লেখো...তোমার চিন্তাকে কেউ না কেউ চিন্তা করে দেখবে এমন সম্পর্ক করো. ... এই সম্পর্কশক্তিটাই অনুশীলনে বাড়ানো যায়, যা কবিতার শরীর অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শরীর শেখানো যায় কিছুটা, কিন্তু চিন্তাটাই আসল, যা কবির ভেতরকার বিষাদ থেকে উঠে আসে প্রতিটি মানুষ বিষাদ পায় চাওয়া-পাওয়ার গভীরতা ভেদে বিষাদগুলি ভিন্ন রহস্য এটাই, কেউ বিষাদ পছন্দ করে না, কিন্তু কবিরা বিষাদ অবলম্বনেই জীবন অনুভব করতে চায় নতুন ছেলেমেয়েদের কবিতা পড়ার পর তাদের ব্যথাকে আমি বিশ্বাস করি আর চুপিচুপি পাশে গিয়ে বলি,'ভালবাসা'....

তুষ্টি - এবার আপনার নিজের কথা একটু শোনা যাক। কবে থেকে কবিতায় এলেন? লেখার শুরু কীভাবে হল? আপনার নিজের প্রিয় কবিদের কথাও বলুন যাঁদের লেখা পড়ে আপনি উদ্বুদ্ধ হন। 

বিভাস - আমি বড় হয়েছি এক হদ্দ গরিব ঝগড়াময় হতাশাভরা রিফিউজি কলোনিতে ভাঙাচোরা ঝুপড়িতে জায়গা কম বলে বাইরের আকাশ মাঠ নদী বাঁওড় আমাদের আপন করে নিয়েছিল ডানপিটে বন্ধুদের দলে আমি ছিলাম মুখচোরা, লেখাপড়ায় ভাল দস্যিপনায় থাকতাম ঠিকই, কিন্তু বন্ধুদের তুলনায় অযোগ্য ছিলাম আমাদের পাড়ায় দু-এক ঘর আলোকিত জগতের মানুষ এসেছিলেন আশীর্বাদের মতো সেরকম একজন অসামান্য মানুষ ধীরেন্দ্রকুমার নাথ তিনি আমাদের বিনা পয়সায় পড়াতেন, বাড়িতে থাকতে দিতেন, বিভূতিভূষণকে দেবতা ভাবতে শিখিয়েছিলেন পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী করা, হাতেলেখা পত্রিকা করা---এসব কাজে মেতে উঠলাম আমরা তাঁর হাত ধরেই আরো তিনি আমাদের শেখালেন পিঁপড়ের গত্তে চিনির দানা দেওয়া, ঘুলঘুলিতে চড়ুইদের জন্য চিঁড়েমাখা রেখে আসা এইভাবেই বোধহয় খিদের পৃথিবীতে স্বপ্নবাস্তবতার প্রবেশ তারপর যা হল আমার জীবনে, যা হয়ে চলেছে, যা পার করলাম, যা পার করছি, তার কোনো স্পষ্ট কৈফিয়ত আমার জানা নেই রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, জীবনানন্দের পর শক্তি চট্টোপাধ্যায় আমাকে আকর্ষণ করেছে কলেজে পড়ছি যখন অসুস্থ বিনয় মজুমদারের সংগে জীবন জড়িয়ে গেল সর্বনাশ টানল তথাকথিত ভাল ছেলের পড়াশুনো মাথায় উঠল বিড়ি মজদুর বাবার, পরবর্তীকালে পূর্ত বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাবার বড় ছেলে আমি আমি তাদের আগামী দিনের ভরসা ছিলাম কবিতা এক যুগ পরে আমাকে সামান্য উল্লেখযোগ্যতা হয়তো দিয়েছে, কিন্তু ধ্বংস করে দিয়েছে বাবা-মার সেই আগামীকে বাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরেছি সত্য, বন্ধুরা আমাকে বাঁচিয়েছে সত্য, কিন্তু বাবারা অসহায় জীবন কাটিয়েছে এটাও সত্য মেয়ের জন্য আমি জীবিকা গ্রহণে বাধ্য হই বেশি বয়সে অর্থাৎ নানা গোলকধাঁধায় কাটছে জীবন যখন আমি লিখি, তখন কোনো অনুতাপ নেই কিন্তু যখন আমি কবিজগতে ঘুরপাক খাই অনিবার্য 'কবি' পরিচয়ে, তখন ভাল লাগে না, মনে হয় এই পরিণতির জন্য আমি প্রিয়জনদের কষ্ট দিয়েছি? আমি মোহগ্রস্ত পতঙ্গ মাত্র

তুষ্টি - আপনার কলেজে পড়ার সময়ে বিনয় মজুমদারের সঙ্গে জীবন জড়িয়ে যাওয়ার ইতিবৃত্তান্ত জানতে চাই আমরা।

বিভাস - ১৯৮৬-তে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বাড়ির পাশের বনগাঁ কলেজে ভর্তি না হয়ে দুই স্টেশন পরের গোবরডাঙ্গা হিন্দু কলেজে বাংলা নিয়ে ভর্তি হওয়ার পেছনে সাহিত্যিক অধ্যাপক ঊষাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের প্রতি আকর্ষণ একটা কারণ ছিল আমাদের দিগরে তখন তাঁর খুব নামডাক অসাধারণ বক্তৃতা শুনেছি কয়েকটি অনুষ্ঠানে জেনেছি কৃত্তিবাসে কবিতা লেখার সূত্রে কলকাতার বিখ্যাত সাহিত্যিকরা তাঁর চেনাজানা তাছাড়া স্যারদের পূর্বপুরুষ গোবরডাঙ্গার জমিদার হিসেবে ইতিহাসখ্যাত স্যারের টকটকে রঙটা আজো মনে পড়ে যাহোক, কলেজে গিয়ে স্যারের সঙ্গে আমার জমেনি তখন তিনি টিউশনি নিয়েই মেতে থাকতেন ক্লাসে আমার সঙ্গে বাদানুবাদ হয় তা নিয়েই পড়াশোনার প্রতি আকর্ষণ কমছিল, আশা ভঙ্গে আরো কমল তখনই জুটে গেলাম ঠাকুরনগরের অমলেন্দু বিশ্বাস, তীর্থঙ্কর মৈত্র (তখন দেবদুলাল মিস্ত্রী এই স্বনামেই লিখতেন), রণজিৎ হালদার, বৃন্দাবন বিশ্বাস, বিষ্ণু বালাদের সঙ্গে বিনয় মজুমদারের চিকিৎসার জন্য তাঁরা তখন ছুটোছুটি করছেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি কবি কলকাতায় ভক্তরা হইচই শুরু করেছেন বিনয়-অনুরাগী মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সক্রিয় হলেন ওদিকে সেবিকাদের নিয়ে কবিতামগ্ন বিনয়দা বাড়ি আর ফিরতে চান না বাড়ি ফেরার কিছু পরে-পরেই পরিচর্যা ও সঙ্গের অভাবেই সম্ভবত আবার বিষাদ এসে তাঁর টুঁটি চেপে ধরত এসব কিছু প্রত্যক্ষ করেছি, কিছু অন্যদের মুখে শুনেছি, কিছু কাগজে পড়ে জেনেছি দৈনিক আজকালে কবির দুরবস্থা সম্পর্কে বেরোত লেখা ঊষাবাবুর একটা মর্মস্পর্শী চিঠি প্রকাশিত হলে কবিকে নিঃশর্ত সঙ্গদান করতে রাজি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক তরুণী আমার সমস্ত দ্বিধা পুড়িয়ে দিল জীবদ্দশায় কিংবদন্তী এক অভিশপ্ত কবির জীবন থেকে ছিটকে আসা অগ্নিকণা তখন আমরা যারা যেতাম, সবাই পুড়েছে ... মনে পড়ে বিনয়দার সেদিনের জন্মদিনগুলির কথা ভুতুড়ে নির্জনতা...আমরা ক'জন অমলেন্দুদা-তীর্থদার নেতৃত্বে খুউউউউব ব্যস্ত....নতুন পাঞ্জাবি গায়ে কবির দেবশিশুর মতো হাসি... দুপুরে দূর-দূর জেলা থেকে লিটল ম্যাগাজিনের কবি, সম্পাদকরা ট্রেন থেকে নামছেন... মৃদুল দাশগুপ্তকে প্রতিবারই দেখেছি...প্রবীর ভৌমিক, রাহুল পুরকায়স্থ আরো কতজন....

     তখন তো আমি সামান্যই লিখি পড়ি কবিতা বুঝি না কিন্তু নেশা হয় সবচেয়ে নেশা হয় বিনয়দাকে দেখলে 'ফিরে এসো চাকা' পড়ে তেমন টঙ্কার হত না শুধু উপমাগুলো অভিনব মনে হত সেদিন তো আর স্বেচ্ছা-সর্বনাশের ছাইমাখা চণ্ডাল-দেবতা শিবকে চিনতে পারার চোখ আমার ছিল না শুধু একটা উত্তেজনায় জড়িয়ে থাকতাম কবিকে নিয়ে বাতাসে উড়ত কত গল্প, কত গায়ত্রী আর সংসার ভাল লাগল না ভাল লাগল না কলেজ আমি বিনয়ের নখের যোগ্য নই, কিন্তু কবিজীবন যে গাজনের সন্ন্যাসীর মতো, নিজেকে তুচ্ছ করা আর যন্ত্রণা সহ্য করতে শেখাও যে এক কবিধর্ম, তার একটা শিক্ষা গোড়াতেই হয়ে গেল আমার ব্যর্থতাই সাধনভজন হয়ে গেল (এইখানে মনে পড়ে শেষ বয়সে বৃহৎ পুরস্কারপ্রাপ্তির সংবাদ পেয়ে জীর্ণ বিনয় মজুমদার ঘরে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে ছিলেন...ভাঙা জানলা দিয়ে ক্যামেরা উঁচিয়ে ফটোগ্রাফার সাটার টিপতে ভয় পেয়েছে....নিজের চোখে দেখা! )       


My Blogger Tricks

5 comments:

  1. বিভাসদা আমার অন্যতম প্রিয় কবি। তাঁর উঠে আসা, ভেসে আসা, বয়ে যাওয়া, রয়ে যাওয়া … সবই নানা মুখে শুনেছি। ডালপালাসহ। এবার তাঁর নিজের মুখে শুনছি। ভালো লাগছে। তাকিয়ে থাকছি পরবর্তী কবিভাষ্যের দিকে। আর হ্যাঁ,তুষ্টিদির এই সাক্ষাৎকার নেওয়া ও কবিমনকে টেনে বের করে আনার চমৎকার প্রয়াসও ভালো লাগছে, খুব ভালো লাগছে।

    ReplyDelete
  2. আমি ভালোবাসি । কেন জিগ্যাসা করলে বলব জানিনা। কারণ জানাটা একান্ত নিজের। কৈফিয়তের দায়বদ্ধতা নেই। ওই মানুষটাকে হাসাতে পারিনি হয়তো কোনোদিন। কিন্তু তারই সৃষ্টির হাত ধরে কাঁদতে পেরেছি ... একটা সময় কান্না হাসির চেয়ে বেশি দামি হয়ে ওঠে ... ভাল থেকো কবি । সবার জন্য ...

    ReplyDelete
  3. বেশ ভালো সাক্ষাৎকার । কবিতাআশ্রম নিয়ে কোনো কথাবার্তা হয় নি ?

    ReplyDelete
  4. বিভাস রায়চৌধুরীকে ১৯৮৮ এর এক বিকেলে অমলেন্দু বিশ্বাসের বাড়ি কবিতা পাঠের আসরে যাওয়ায় পথে প্রথম আলাপ হয়েছিল । লক্ষণ চন্দ্র মল্লিক আর আমি অমলেন্দুদার বাড়ি খুঁজতে ওকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম । ও বলেছিল 'আমার সঙ্গে চলুন, ওখানেই যাব । ও বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ে তখন । রণজিৎ হালদার, বৈদ্যনাথ দলপতি আরো অনেকের সাথে আলাপ হয়েছিল । সুদর্শন কবি মলয় গোস্বামী, অকালে স্বেচ্ছায় বিদায় নেন পরে শুনে মর্মাহত হয়েছি, এর সাথে আলাপ হল । প্রশান্ত হালদার । সবাই অল্পবয়সী, তরুন । যাই হোক সেই বিভাস পরে সুপরিচিত কবি । বিভাসের একটা নভেলেট দেশ পত্রিকার সাধারণ সংখ্যায় পড়েছি । মুগ্ধ হয়েছি পড়ে । কবির উপন্যাস এমনই হয় । বাতাসে, মাটিতে সর্বত্র বিষ - এই ছিল উপন্যাসের বিষয় । নামটা ছিল সম্ভবত ডানা । ওর সাক্ষাৎকার পড়ে ভালো লাগলো । পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে গেল ।

    ReplyDelete
  5. পড়লাম।অবিভূত হলাম।একজন আধুনিক কবি কবিতার জন্য কীভাবে নিজেকে পুড়িয়েছেন,আজ‌ও কবিতার মধ্যে রয়েগেছেন।বিনয় মজুমদারের সুযোগ্য শিষ্য‌ই বটেন বিভাস রায়চৌধুরী।তাঁর চিন্তা,তাঁর মনন,তাঁর কবিতায় যাপন সে কথায় বলে বার বার।

    ReplyDelete