Wednesday, September 28, 2016
..........শঙ্খপল্লব
আদিত্য.........
সম্পাদনায়ঃ রমিত দে
শিল্পীর ভেতর কোথাও না কোথাও কিছুটা শ্রমন থেকেই যায়, যে
মূর্হুতে এই ভীড় কোলাহল পথের মাঝে পথ হারায় শিল্পী ওমনি সেই শ্রমন তাকে উদ্ধার করে
নিয়ে চলে স্থিরতার দিকে। কুষ্টিয়ার দিনগুলোতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও তো কেমন
মাঝেমধ্যেই একা হয়ে যেতে চাইতেন,খালি বলতেন “সাধনার’ লেখার ঝুড়ি পদ্মার জলে ভাসিয়ে
দেব;কিন্তু জানি, ভাসিয়ে দিলেও সে আমাকে তার পিছন পিছন টেনে নিয়ে চলবে”। আসলে কবিতা নয় কোথাও যেন ‘জীবন’ শব্দটাই আজীবন
এক কবিকে ধাওয়া করে। ব্যক্তিগত নিবিড় নিভৃত অন্তরতম খেলাঘরেও তাই কবি কখনই চাননা
যাপনের জটিল গ্রন্থিগুলি সবটুকু উন্মুক্ত হয়ে যাক,কারণ জগতের কাছে সে বিস্মৃত হয়ে
গেলেও এই ছোটো ছোটো অস্তিবিন্দু গুলোর মধ্যেই বিঁধে রয়েছে তার ব্যক্তিগত আশ্রয় , বারবার
ফিরে আসার কথা। ফলে ‘জীবন’ শব্দটা কোনভাবেই একজন প্রকৃত কবির কাছে আরোপিত অথবা
আকস্মিক হতে পারেনা। তিনি প্রচারভিমানী হতে পারেন, হতে পারেন বাজারচলতি ব্যবসাপাতি
থেকে সযত্নে নিজেকে সরিয়ে রাখার পক্ষপাতী কিন্তু তার সক্রিয় নান্দনিক প্রত্যয়
অলক্ষ্যেই জীবনের খনিজ ঘেঁটে চলেছে। এবারের হারিয়ে যাওয়া কবিকে নিয়ে লিখতে বসে
প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো এ লেখার আগে অবধি কবি শঙ্খপল্লব আদিত্যের কোনো
কবিতার সাথে সম্যক পরিচয় আমার ছিলনা; কবির নাম জানতুম ,এদিক ওদিক টূকিটাকি দু একটা
কবিতা পড়েছিলুম কিন্তু ওই অবধিই। কবিতার সাথে আত্মীয় হয়ে ওঠার মত প্রত্যক্ষ
প্রশ্রয় ততদিন পাইনি। হয়ত এ অক্ষমতার দায় শুধু আমারই । কিন্তু আজ তার এক গোছা
কবিতার মধ্যে দিয়ে যে কথার স্রোত ঠেলে ঢুকল-মনে হল কোথাও যেন নিজেকে ভেতর থেকে
ছিঁড়ে তলিয়ে যাই ওই স্রোতে , যে মূহূর্তে জীবনদর্শনের এক পরিচ্ছন্ন বিবৃতি উঠে এল
তাঁর শব্দের হাত ধরে, যেমূহুর্তে তিনি উচ্চারণ করলেন-“ তোরা কেউ দুঃখ লিখতে
পারলিনা/অভিধান ও মুখস্থের দৌলতে শুধু অশ্রু বানানটা ঠিকঠাক শিখেছিস,/ তোরা কেউ
দুঃখ লিখতে পারলিনা/তোরা কেউ সুখ লিখতে পারলিনা,/তোরা কেউ আনন্দে কাঁদতেও শিখলিনা’
সেমূর্হুতেই মনে হল তিনি তো ছিলেন আমাদেরই বিকল্প সংকলন হয়ে আমাদেরই শূন্যতায়। ফলে
কোনোভাবেই তার কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়না-“আপন আপন খবর নাই/ গগনের চাঁদ ধরবো বলে
মনে করি তাই” এবং সে অর্থে শঙ্খপল্লবকে প্রথমেই এক আত্মীয় ধরনের কবি বলতে আমার
দ্বিধা নেই, যেন শব্দের মধ্যে দিয়ে নিরবে নিঃশব্দে শরশূন্য হতে হতেও রয়ে গেছেন
সুহৃদ ও সহযাত্রী হয়ে। তাঁর একমাত্র কাব্যসংকলন হাতে আসে কবি ঔপন্যাসিক পল্লব
ভট্টাচার্যের সৌজন্যে।মুখবন্ধ লিখেছেন পল্লবদা নিজেই আর তা থেকে পরিষ্কার কেন
অখ্যাত অজ্ঞাত থেকে গেলেন তিনি –“কবিতার কর্মকাণ্ড,প্রচারসর্বস্ব আনুষ্ঠানিকতা
থেকে বহুবছর নিজেকে গুটিয়ে রেখে লিখে গেছেন স্বতন্ত্রবোধের কবিতা। ...তাঁর কবিতার
বই বেরোয়নি কারণ তিনি কোনও গোষ্ঠীতে নেই।সভায় সমিতিতে অনুপস্থিতিতেই প্রায়
অভ্যস্ত। প্রচার এবং পুরষ্কার থেকে বহুদূরে থাকা স্পষ্টবাদী এবং অভিমানী একজন।ফলে
একধরনের নৈঃশব্দের শিকার হয়েছেন।তার কবিতা সম্পর্কে নীরব থাকতেই অনেকে পছন্দ
করেছেন।“-অর্থাৎ প্রচলিত অর্থে প্রতিষ্ঠান নামে একটি নৈতিক পরিমণ্ডলে তিনি রয়ে
গেছেন অস্তিত্বহীন ও অসক্রিয় এবং হয়ত কিছুটা হলে এ তার নিজেরই চেয়ে নেওয়া নৈতিক
দর্শণ। কিন্তু স্থান-কাল বিধৃত মানুষের মধ্যে কিভাবে সুক্ষ ও ব্যাপকভাবে ঘনিষ্ঠ
সম্পৃক্ত তিনি ! তার কবিতা !এই প্রশ্নটাই বারবার জন্ম নিয়েছে,নেবেও। না, যেভাবে
পুঁজি আর প্রতিষ্ঠানের মসনদে তার বাচনভঙ্গি অচেনা রয়ে গেছে ,এক্ষেত্রে তেমন
প্রত্যুত্তর বিহীন কোনো সংলাপের আশা করা যাবেনা ,উলটে তার কবিতা একজন
আত্মকেন্দ্রিক কবির ভেতরের শব্দের একান্নবর্তী বাগানটাকে উন্মুখ করে দেয় আমাদের
সামনে। তিনি বললেন- “ আমার ভেতরেও শব্দের হাঁটাহাঁটি অনেকটা এরকমই/ কখন বা শব্দ
বিশাল-মিছিল-নিশান নিয়ে শব্দ করে/ আমার খাবারের থালা গেভা মাংসের ঝোলে ছেয়ে যায়/ আমি
ফালি ফালি করে শব্দ রেখে যাচ্ছি/.../মরিয়ানি নারী ও পুরুষ অলৌকিক গর্ভের সঞ্চয়ে
শুধু জমা করে যায় শব্দের শেকল/এরকম শঙ্খনীড় গারদে আনুগত্য ও বিদ্রোহ দুটোই ভালো/
আমি সকলের চোখের সামনে দুটোর মাঝামাঝি এক ব্রিজ /থেকে উঠে এশ্চি...” বিজ্ঞাপণের
মধ্যে যে মানুষটা বেঁটে, বাকের মধ্যে সেই মানুষটারই লম্বা ছায়া । তার দেখা, পারিপার্শ্বিক
থেকে গড়ে ওঠা দেখা আর তাই বিচিত্র অভিজ্ঞতার সংঘর্ষ ঘটছে সেখানে আর এভাবেই শঙ্খপল্লব
আদিত্যের কবিতা কখন একজন একবাচনিক মানুষের বিচ্ছিন্ন অস্তির আড়ালে হয়ে উঠছে বহুবাচনিক
আর্তির ক্যালিগ্রাফি। তিনি ত্রিপুরার কবি, ময়মনসিংহ পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে প্রায়
পঞ্চাশ বছর আগে চলে আসা একজন ছিন্নমূল মানুষ, তবে কি তার শব্দরা কেবল জীবনচ্যুতি
আর উদ্বাস্তু অসহয়তার দ্বারা স্বীকৃত! না, তার কবিতার প্রতিস্ব ও পরিসরগুলো কেবল
অ্যালিয়েনেশনের আঁচড়ে বাহিত নয় বরং ভেতরে ভেতরে উঁচুনিচু আনন্দের আশ্রয়বসতিগুলোও
গড়ে উঠেছে ,আর এভাবেই একজন কবি তার নিজের ভাষার মধ্যেই কখন যেন সত্তার উপভাষা বা
ইডিওলেক্টগুলোকে বিশ্লিষ্ট করে নিয়েছেন। জীবন তো কেবল একটি মাইলফলক নয়, হাজার একটা
মননবৃত্তির মাইলফলক জুড়ে জুড়েই যে জীবন তার কাছে এসে ব্যক্তির পলকা ঢেউগুলো ধাক্কা
খায়। তার কবিতার পোট্রেট আর ল্যান্ডস্কেপগুলোও এভাবে বারবার সীমাভাগজনিত বাঁধা
বুলির সিনথেসিসে অন্তর্ঘাত ঘটিয়েছে। যেমন “কার্ফু” নামের কবিতায় শঙ্খপল্লব আদিত্য লিখছেন –“ আমার বাবার সমুদ্র
মার্বেলের ভবিষ্যৎ ফুটো করে দিয়েছিল পঞ্চাশের আকাল/ আমার মায়ের ব্রজবুলি গয়না ও
টাঙ্গাইলের শাড়ি সীমান্তরেখার বেআইনি জঠরে উপদেশামৃত মাটি হয়ে মিশে গেছে কৃষকের
লাঙল আর মাছের শরীরে/ রাজ-নারকীয় ত্রিতল থেকে ছিটকে পড়া ময়দানে গণতান্ত্রিক নেতার
হুংকার আমার প্রেম,ঈশ্বর ও ভূমেধক্রান্তি সম্ভাবনাকে বানিয়েছে ফতুরফকির/এমন
চিত্রাঙ্গদা তোয়ালের উপর বেড়ালের লালা বা আরশোলার ছেঁড়া পাখনা ছাড়িয়ে রাখতে কার
ভালো লাগে।/চোখের গর্তে ডোবে বারুদবোঝাই মার্কিন জাহাজ...” এ পর্যন্ত পড়েই হঠাৎ
খেয়াল হল একেবারে প্রথম পংক্তিতে তবে শঙ্খপল্লব কি লিখলেন? –“ প্রতিটি চোখের গর্তে
ঢুকে আছে হৃদয়”-তবে এতক্ষণ আমরা যে ভাবতে বসেছিলাম আদিত্যপল্লবের কবিতার গাঢ়
অন্ধকারে যেখানে কোনও আলো পৌঁছয় না ঠিক সেখানেই কি নতুন এক আলোকবর্তিকা দিয়ে হাত
টেনে ধরা হল পাঠকের! ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কবি কি আমাদের রক্তে
অলক্ষ্যেই সেই বীজ ঢুকিয়ে দিতে দিতে মনে করিয়ে দিলেন -‘Your other self
is always sorry for you. But your other self grows on sorrow’। কেবলমাত্র উদ্বাস্তু বিচ্ছেদ আর
ক্লান্তিকর সংগ্রামের আবহে জারিত নয় তার কবিতা বরং সেখানে একটি অভীপ্সার থিসিসও
রয়েছে। যারা ছবিটবি বানান তারা জানেন একটা ছবি বানাতে গিয়ে বাস্তবের থেকেও বিচার্য
হল বাস্তবের প্রতিফলনের বিষয়টি, অর্থাৎ চলচ্চিত্রের নিজস্ব পৃথিবী গড়ে তোলা ,আর তা
সম্ভব ক্যামেরা কিভাবে দৃশ্যগ্রহণ করছে তার ওপর; শঙ্খপল্লবের কবিতা যেন দৃশ্য থেকে
দৃশ্যপর্যায় গড়ে ওঠার এই ব্যঞ্জনা পূরণ করে। তার কবিতাকে কখনও চূড়ান্ত কনট্যিনুইটি
হিসেবে ধরলে মনে হয় ভুল হবে ,বরং মধ্যবর্তী আলোছায়ার বিভিন্ন বিভাজনগুলোর মধ্যে যে
ভিস্যুয়াল পিকচোরিয়ালিজম তা থেকেই ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও ঢুকে পড়া সম্ভব মেন্টাল ও
ইমোশনাল পিকচোরিয়ালিজমে। কিন্তু কীভাবে?
তাহলে প্রথমেই একটা ১৫ লাইনের কবিতা পড়ে নেওয়া যাক (সম্ভবত
তার কাব্য সংকলনের অন্যতম সংক্ষিপ্ত কবিতা এটি)। কবিতাটির নাম “পুনশ্চ” ।
“আসলে এরকম প্যানপ্যানানি ধরনের একটি লেখার ইচ্ছে মোটেই
আমার ছিল না । গভীরভাবে ভাবছিলাম, টপধূর-উপাধির কুৎসিত
উদ্বাস্তু জীবনের লাফাঙ্গা গরিবদের সুখ-অসুখের মূলত্রান
নিয়ে একটা
লেখা লিখবো, কিন্তু দেখলাম, অভ্যেস এতো দারুণ করে ফেলেছি
যে মারুতি জিপসাইট আরাম করে বসে,পাশে দু তিনটে ফিল্মি
ডিজাইন মার্কা মহিলা নিয়ে মাইল দশেক না ঘুরে এলে মেজাজ
ফিরে আসেনা, মুড আসে না দুতিন পেগ দামি স্কচ ও কিচাইন না
হলে, মুড আসেনা মোজায়েকি শ্বেত পাথরের টেবিল না হলে ।
আসলে বিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের তাজমহলি সদাচারগুলি না হলে
গরিবদের নিয়ে লেখা আমার পক্ষে আপাতত এক্কেবারেই অসম্ভব ।
পাঁচ দশকের বেড়ে ওঠা এই সদাচারের দাম্ভিক সক্ষমতার জন্যে
আমার আর আপাতত দুঃখী মানুষদের জন্যে কোনও পদ্য বা কবিতা
লেখা হয়ে উঠলো না বলে মহামান্য পণ্ডিত ও অবিরাম সৃষ্টিশীল
হুজরুদের কাছে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাতে ক্ষমাপ্রার্থী । ইন্নালিল্লাহে ইয়া ...
কেন না, আমিই থাকবো একা ‘দুধে আর ভাতে ‘।
কবিতাটিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা সিংগল লোকাস ভাবা যেতে
পেরে, যেন খুব স্পষ্ট ভাবে তার অপরাগতা সাজিয়ে দিয়েছেন কবি, কিন্তু কবিতাটির অতল
গর্ভে রয়ে গেছে আরও কিছু অনন্য ঢেউ ,কিছু অসহায় ও শান্ত বিদ্রুপ যা কিছুটা হলেও
আত্মপীড়নও বটে। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনের এতটা পথ পেরিয়ে এসেও কি তবে শঙ্খপল্লবের
আনাচে কানাচে এসে দাঁড়ায় কোনো এক উদ্বাস্তু পাঠশালা ! যা পাঠের শেষে পাঠকের কাছে
হয়ে ওঠে সাবটেক্সট ! নিজেরই অস্তিত্বের সাথে এই লড়াই কেবল একটা কবিতায় নয় , তার
একাধিক কবিতায় আমরা লক্ষ্য করতে পারি এমনই মানসিক আততি যার অমোঘ ফাঁদ ডিঙিয়ে যাওয়া
প্রায় কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফলে তার ভাষা যেমন একদিক থেকে বিধ্বস্ত এক মানুষের তেমনি
তা নিজের ভাঙাচোরা ছায়াটাকে সারিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়া আরো এক মানুষের।
প্রেতায়িত পূর্বকাল শঙ্খপল্লবের উত্তরকালে যখন এসে দাঁড়ায় তার রক্তাক্ত যন্ত্রনার
ধারাবিবরনী দিতে তখন তার কবিতার শানিত ভাষা আর বিবেকী কল্পনার মাঝে এই যন্ত্রনাবোধ
কিন্তু কেবল ছায়ার প্রাসাদ গড়েনা বরং এক ধরনের প্রসঙ্গহীন একা শঙ্খপল্লবকে তুলে
ধরে পাঠকের সামনে, এই বাস্তবের সামনে শঙ্খপল্লব যখন বলে ওঠেন –“ ভিড় ! তবু একা, খুবই
একা । /এখান থেকেও দেখা যায় আমাদের মা তখন উপোসী শরীর নিয়ে নক্ষত্রস্পর্শী/দু হাত
বাড়িয়ে ভাবে/ এইতো এক্ষুনি এসে পড়বে আমার মৃণাল, আমার খোকা/ ততক্ষণে থোকা থোকা ঘাম
নিয়ে মডেলি ন্যুড তারকারা/ নখ দিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে আমার চোখের বেড়াল দ্যুতি ও
নবারুণ পালক/ শ্রীচরণেষু মা, এখন আর আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করোওনা,/কারণ আমি এই
অন্ধ অজ্ঞানতা নিয়েই একজন মহাপুরুষের/ আন্ডারওয়্যার-কাশি-ঘামাচি ও হাঁচি নিয়ে
ডক্টরেট করতে করতে/ বেশ আছি, ভালো আছি, খুব ভালো আছি।“ -সত্যিই কি ভালো আছেন শঙ্খপল্লব? একটা ‘বিত্তবান
বিষাদ’, একটা ‘পবিত্র অশ্রুপাত’ তার মানুষের মালঞ্চ ও মালবিকায় এভাবেই আঁটোসাঁটো
হয়ে চেপে বসেছে আসন্ন ও অনায়ত্ত জীবনের উপার্জন হিসেবে।
না, তার কবিতা কেবল কল্পনা নয় ,ফলে একটি মধ্যবিত্ত পাঠকের পক্ষে
একেবারে হাপুস করে চেটে নেওয়া সম্ভব নয় আদিত্যের কবিতাকে। বরং গন্ধের পেছন পেছন
ছুটে গিয়ে পৌঁছনো যায় একটি প্রান্তিক দ্বান্ধিকতায়।একটা পুরো সময়কালের শিরশিরানি
যেভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন আদিত্য তার শব্দে তার সাঙ্কেতিক চিহ্নে তাতে তার কবিতাকে
কেবল ধারনা দ্বা্রা আক্রান্ত করা কখনই সম্ভব নয় বরং জীবনের দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর
ভূমিহীন নোঙরহীন এক শঙ্খপল্লবের অতীত নিষ্ক্রিয় শূন্যে পৌঁছতে পৌঁছতে আমরা আসলে
নিজেদেরই একধরনের ইসথেটিক রিয়েলিজমে পৌঁছে যাই। যেমন ধরুন তার গলায় ত্রিপুরীয় খড়িমাটি লেপটে মাখা আর ওই গলা দিয়েই ফুঁ
দিয়েছেন ব্রহ্মপুত্রের তরঙ্গায়িত জলে ,খুঁটে খেয়েছেন ঊনকোটির প্রতিটি ঊর্বশী কোরাস
আবার এই গলা দিয়েই বেরিয়েছে ‘আমরা সবাই আছি ,বোবা পাথর,ভালোই তো আছি’ আবার এই
গলাফাটা স্বরেই সারাজীবন যেন মেনে নিতে হয়েছে একটি পাকাপাকি বাসার মায়াবী ধকল! জীবনবাস্তবের
মধ্যেই কল্কি সাজিয়েছেন , আবার যাপন থেকে বেকসুর খালাস না পেয়ে উঠে এসেছে চর্মভেদী
কান্নার শব্দ।এই সার্বিক প্রত্যাখানের গল্পে কি আ্মাদের প্রতিটি অস্তি আশ্রয খুঁজে
মরছে না? আসলে শঙ্খপল্লব আদিত্যের ব্যক্তিমাত্রিক টেক্সট কোথাও একটি আপেক্ষিক
কালের সুতোয় মাজা, যে অনুশোচনা যে হাহাকারের কথা বলেছে আবার নিজেরই নাবালক অজ্ঞ
ছায়াকে ধাওয়া করে ফিরেছে নির্মল কাঙালের মত, পোস্টমর্ডান পরিসরে পাঠক সেখানে নিজেরই
অনির্নীত বিশ্বটাকে আবিষ্কার করে।
শেষমেশ তিনি কি যাতনায় দগ্ধ? না, দীর্ঘ এক পরিক্রমণের শেষে
শঙ্খপল্লব কোথাও নাস্তিতে খুঁজে ফিরেছেন পরিণতিহীন নিমিত্তমাত্র। ঋতুবদলের
হাঁড়িকুড়ি থেকে শূন্যের সৈকত তাকে টেনে নিচ্ছে বারবার-নতুনের দরজা খুলছেন, কনটেক্সট
বদলে দিচ্ছে তার টেক্সটকে। সীমানা ভাঙার খেলায় কিভাবে কথন বদলে যাচ্ছে দেখুন-শঙ্খপল্লব
লিখলেন“ মাঘসংক্রান্তি ও বৈশাখপূর্ণিমা ছাড়িয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে/এক অদ্ভুত
কাচঘর/ .../বলুন, এই কুয়াশাসমুদ্রে আর
কাকে ধরতে হবে?”ফলে শঙ্খপল্লব আদিত্যের কবিতায় সমাজ ইতিহাসের গভীর স্তরকে স্পর্শ
করে যেমন একটি গল্পের জগত রয়েছে তেমনি তার পাশাপাশি একটি মহাশূন্যের গানও রয়েছে।
কখনও তিনি আটকে যান কখনও তিনি প্রবল চেষ্টায় বেরিয়ে আসেন অস্তিত্ব আর অফুরন্ত
প্রহেলিকা ধরে ধরে অবচেতনের ব্যক্তিগত ভরকেন্দ্রে।অথচ তা ব্যক্তিগত নয় তা যেন
বিকারের প্রতিবাদ,বাঁচবার অঙ্গীকার ,যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের
চিন্তাতন্ত্রে জেরা করিছি রোজ...
দেখতে দেখতে প্রায় ষাটটা পর্ব হয়ে গেল বাংলা কবিতায় সময়ের
সাথে সাথে হারিয়ে যাওয়া/প্রায় হারিয়ে যাওয়া কবিদের নিয়ে এই সামান্য খননটুকুর; প্রায়
প্রতিটা পর্বেই লিখতে গিয়ে কোথাও যেন একটু হলেও নিজেরই একধরনের দীর্ণ প্রতিফলন
দেখতে পেয়েছি বারেবারে, নিজে কবিতা লেখার যুক্তিতে বা সময়ের সাথে অবশ্যম্ভাবী হারিয়ে যাওয়ার নিরিখে নয় বরং একজন
সামান্য মানুষ হিসেবে সংঘবদ্ধ জীবনোলব্ধির মধ্যেও একাকীত্বের এই সীমার মাঝে কোথাও
যেন বন্ধনহীন মুক্তির এক উচ্চারণ বড়ো ঘনিষ্ঠভাবে মিশে রয়েছে বলে মনে হয়েছে। মনে
হয়েছে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে বিশ্বমায়াকে আঁকড়ে ধরার প্রস্তুতিতে বেড়ে
উঠলেও তা একমাত্র জৈবিক সত্য হয়ত নয় বরং কালস্রোতে এই প্রস্তুতির ঠিক পাশেই আলতোভাবে
দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ভাঙনের প্রতিসন্দর্ভ,এবং তা সময় দ্বারা চিহ্নিত। ষাট ষাটটা
পর্বের কবিদের দিকে তাকালেই দেখব হয় তারা সম্পন্ন হয়ে সেজে উঠে আমাদের থেকে দূরে
চলে গেছেন নয়ত আমরা চিনতেই পারেনি তাঁদের থাকা –থামা- প্রতিটা ধ্বনি- প্রতিটা মিড়
আর তাঁদের এই পরিসরহীনতা থেকেই হয়ত আমরা এগিয়ে চলেছি নিজস্ব পরিসরের দিকে । কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই গেছে, কে এগোলো, পিছিয়েই বা গেল কে !
(বিশেষভাবে
ঋণস্বীকারঃ-কবি প্রাবন্ধিক পল্লব ভট্টাচার্য –যাকে ছাড়া কবি শঙ্খপল্লব আদিত্যকে
নিয়ে এ কাজ করা অসম্ভব
ছিল ।বাকপরিবারের সদস্য হিসবে এবং
ব্যক্তিগতস্তরে তার প্রতি আমি আন্তরিক ঋণী)
দিব্য সমুদ্রবিপ্লবে
কোনও এক রক্তাক্ত সৈনিকের হামাগুড়ি
অনেক অপরিহার্যতাই সামাজিকভাবে নিন্দনীয়, আর এভাবেই সমাজের
হুজুগমেলায় আমিও রাজানুগত্যের বিপ্লবী সৈনিক ... তারপর ...
পরাজিত হলে জল-ঝড়-রোদে ছাউনি খুঁজি নীল ঝালর পাতায় –
লাবণ্য-র হাতের উঁচুতে
পাতার আঙুল, মুখ ঢাকি নিকেল সূচের ডগায়
স্বপ্নে আচমকা ডাল ভাঙি, দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে কুটি কুটি করি
ভালোবাসা, পাতা
জম্পুই কমলার আড়াল ও লংথ্রাই-র সূর্য কালেশ্বর
জানালার পর্দা তুলে সীতার হরিণ কুয়াশার স্নো ও ক্রিম ঘষছে
শিপ্রার কপোলে
ধীরা ও সিদ্ধার্থের শিরায় যেমন কত্থক রক্ত টগবগিয়ে ওঠে
বাস্তব ও অতিরিক্ত ভালোবাসায়
এরকম
এগোতে
এগোতে
পিছোই
এরকম
পিছোতে
পিছোতে
এগোই
সঠিক পরাজিত হলেই হৃদয়ের ঝোপ-ঝাড় কাঁটাতার
আকশের গভীর কিংবা পাতার টাঙ্গি-তাঁবু খুঁজি
যেমন খুঁজি কম বয়েসি কাতর বালক-বালিকা, আসন্ন
প্রসবাক্রান্ত
পশু ও প্রতিভা
কিংবা আমেরিকার সবুজ গ্রামের উদভ্রান্ত প্রেমিকা ও
উজ্জয়িনীর
ইতিহাস, গন্ধাক্রান্ত ও কোটালপুত্র
ব্যাঙ্কে শেষ ৫ টাকা সঞ্চয়ের মতোও যদি কোনও স্মৃতি থাকতো
আমাদের
সূর্যের করোটি বাগানে !
অফিসে ঘেরাও ওইসব সুখদুঃখ-বাসা,বাঁধা ঝাঁক, ঝাঁক চিকন
পত্রালি সুহৃদ ও নীরার
পৌরষময় বুকের পাটাতন ও মায়াবী নদীর হৃদয় অন্ধকারের
নিরঙ্কুশ চোখে চোখ রাখতে রাখতেই ...
সামাজিকভাবে নিন্দনীয় অথচ অপরিহার্য
তেমন একটা কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে
মনে হয় বেঁচে আছি বুকের জোরে একান্ত অনুগত হয়ে ...
হে রাজা, তোমার চিলকা শরীরের রক্তাক্ত দিব্য সমুদ্রবিপ্লবে
।
সম্রাট শঙ্খপল্লব ও শ্মশানগাথা
প্রেমিকের রুমাল ও নীল খাম মাড়িয়ে সবুজ তিরের মতো মহিলারা
সাঁই সাঁই হেঁটে যাচ্ছে শহর
রাজধানীর হরলিকসে । আগামী তিন চার দশক পর শহরের আবর্জনা ও
ময়লা আড়তের
কাছে, এইখানে আবিষ্কৃত হবে এক সম্রাটের কবর ও কারখানা ।
ভারতীয় বস্তির জমিদারি
আস্তাবলের মতো জীবন ও সংগ্রামের পতাকা নিয়ে সভ্যতার দালান
রেলিং ধরে হেঁটে যায়
এক পুরুষ মাতাল। তার গোপন মুখে ক্যান্সার চাদর ঢাকা এক
প্রচন্ড পতন-উত্থানের সঙ্গীত ।
মন্দির ও বেশ্যালয়ের ফাঁক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মানবের সোনালি
জীবন, পবিত্রতা ও যৌনতা
কোনওটাই এড়াতে পারেনি রোমান ও লায়লি । পারাপারহীন ক্ষুধা ও
তৃষ্ণা নিয়ে মানুষের সুখ
থাকে, সুখ যায় । কয় গ্লাস পান করলে মানুষের তৃষ্ণা মেটে ? স্টিল
ও প্লাস্টিকের ঘাসের উপর
দিয়ে হেঁটে বেঁচে আছে আমাদের সবুজ অনুভব । দুর্দিনে
রত্নাদির ১০ টাকার মানবতা রেস্তোরাঁয়
খেয়ে হাই তুলে বলে উঠেছি ‘শাবাশ’। মহিলার সুখ ও দুঃস্বপ্ন আমাকে এক অপরিচিত অসুখের
দিকে ঠেলে দেয় ভাদ্রের পারদজ্যোৎস্না বালিশে বেঁধে নিয়ে
নেশা বিছানায় শুয়ে আছি ।
কল্যাণী থেকে ক্লাউন বাসে ফিরছি, ঈশান আকাশের বৈদ্যুতিক
অশ্বারোহী মানুষের ঘুম ও
সুখের দিকে ছিটকে দিচ্ছে ১০ লক্ষ বহ্নিফুল, হাইফাই আওয়াজের
বিশ্রি মঞ্চ থেকে স্বাস্থ্যবান
ছারপোকার মতো এইসব ফুলপান্ডু লিপির ভাঁজে লুকিয়ে রেখে ১২
মহাপুরুষ শুয়ে থাকে
শৌখিন গাড়ি বারান্দায় অথবা স্বর্গের সিট রিজার্ভ রেখে নকশি
সোফারই বেডসিটে । ১০ ইঞ্চি
পুরু ইটের গাতনির ভেতর থেকে মানুষের আত্মা গলগলিয়ে যাচ্ছে
।
মধ্যরাতে বুকের বিচিত্র মাদুলি ও টুপিতে হাত দিতেই বাইরে
থেকে ফটক ও তালা খোলার
মতো ঠক ঠক ঠক ঠক শব্দের ভেতর একজন দানবাকৃতি সাহেব মানুষের
ভাগ্যের খুলিতে
করে দিশি মদ খেতে খেতে ঘাম ঝাড়ছেন আর সাড়ে তিনহাত কবর
খুঁড়ছেন । সামনের ফলকে
ভাস্কর্যের রোমান হরফে লেখা আছে , ‘এখানে শুয়ে থাকবেন
সম্রাট শঙ্খপল্লব এবং সময়কুকুরের
পান্ডুলিপি।‘ প্রধান রাজধানী শহরে মন্ত্রীদের বাসভবন ও
সেনাছাউনির মধ্যবর্তী পিচের কাছাকাছি
এই কবরের পাশে কয়েকটি শিয়ালমূত্রির গাছ ও ভূতের থু থু
জাতীয় বাতাসে ফর ফর করছে ।
হাওড়া ব্রিজের চেয়ে এক বিঘত দূরত্বের ব্যবধানে রেখে আমি ও
অশ্রু হেঁটে যাচ্ছি। আমি যতোবার
ফুল ও ভালোবাসা অশ্রুর দিকে ঠেলে দিয়েছি সেও ততোবার সমান
ওজনের অচল ১০ পয়সা ছুঁড়ে
দিয়েছে আমার দিকে। চোরাই চালানের ট্রাকের মতো নিজস্ব আড়তে
পৌঁছবার শব্দ করে এগিয়ে
যায় সাহেবের কবর খোঁড়ার কাজ ।
হুংকার-অশ্রুও বন্দী হয়ে যায়
পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর আগে
আফ্রিকার আদিম অরণ্য থেকে কেন্দ্রীয় রাজধানীর ৬০ হাজারি
স্টেডিয়ামের এক কোণায়
এনে রাখা হয়েছিল একটা দুর্দান্ত সিংহ
অনেকটা সার্কাসের মতো খাঁচায়
গোড়ার দিকে সিংহটা সূর্যস্পর্শী বিকট
গর্জনে শব্দ করে
খাঁচা উলটে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলো, তারপর উসখুস
ক্রমশ শেকল ও শিকের প্রতিরোধে
ওই ইচ্ছেটা
উবে গিয়ে অদ্ভুত একটা অসুখ সিংহটাকে আক্রমণ করে
চোখে ভবিষ্যৎভেদী কাচ লাগিয়ে
আসে দেড়হাজারি চিকিৎসক , নিয়মপনা ও যত্নের শেষ নেই,
শ-দেড়শ তলা প্রাসাদের সুদৃশ্য সমুদ্রপার থেকে তত্ত্ব ও
মন্ত্রশুদ্ধ
তাল তাল শাদা মুদ্রা আসে, আরাফতি নারীর পাতায় তৈরী পুরু
চুরুট, গ্রিসিয় বৃক্ষের আতর পাতার চাদর, প্লাস্টিক জাফরির
মাকরি
ও ফ্রাঙ্কফুট শেভিংক্রিম, তালু ও ঠোঁট পালিশের কারবালা
মেহেন্দি
ঘিলুর জন্য আদিবাসী ভুট্টা ও খই উরাতের মাংস, বাগদাদি
সুরমার
ভ্রূ-ভঙ্গি লতিশাল চালের ফিন্নিপোলাও সিংহটা
মাংস ও মোহর কোনটাই গেলে না ।
এ এক ব্যতিগ্রমের অসুখ, ডাঃ বার্নার্ড আসেন
হৃদয় বদলের নির্দেশ ও কার্যক্রমও ব্যর্থ হয়
অসুখ না পরির নজর, ঠিক বোঝা যায় না
সিংহটা বিবৃতি-বাসবলেহ ও ব্রাহ্মীবৃক্ষের মূল-লতা-পাতা খায়,
ঘুমায় না
গদি দখলের ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমোয়-রাজা উজির
ও কর্ণওয়ালিশের নাম লিখে কাগজ টুকরো টুকরো দিলে গিলে ফেলে ,
কুলি-কামিন ও কালো গোলাপের নাম লিখে দিলে শৈশবের আদরের
মতো কাগজের ঘ্রাণ নিতে নিতে যৌগিক বেহালার আলাপের মতো
শতাব্দীর বিষন্ন
সিঁড়ি ও পাথর হয়ে যায় ওর মুখ, মাঝে মাঝে সর্পিল ইয়ার্কির
মতো হাসে,পদ্মগোখরোর মতো জিভ দিয়ে মুখ ও শেকলের ফেলা চাটে
সিংহটা নাকি স্বপ্নও দেখে , মাঝে মাঝে গাড়ির গৌরীবারান্দায়
খেলা হয় টেক্কা-ফ্লাস,মোমদানা-বাতিদান নিয়ে কোকাকোলা থেকে
হুইস্কি সাম্রাজ্যে চলে যায়, সেখানেও নাকি মদ খায়-গাঁজা
খায়,
বেশ্যাবাড়ি যায়,সিংহের ঘাড় ও পেটের চামড়া ঝুলে গেছে
দিনকে দিন আরো ঝুলতে থাকে
তবু মাঝে মাঝে
অদ্ভুত বিলাপের সুরে গরজায়
গরজায় গ-র-জা-য়
‘খাদ্য ও খাঁচা পাল্টাও –‘ ডাক্তার নির্দেশ দেয়, লোহার
বদলে
হিরন্ময় স্টিলের খাঁচা আসে, ইন্টারভ্যু ও শেয়ারমার্কেটের
অনেকগুলি দলিল দস্তাবেজ ওর দাঁত ও নখের কাছে রাখা হয়
সিংহটা জৈষ্ঠ্যের বিয়োনো-গাভীর মতো কান নেড়ে মাছি তাড়ায়
একবার বছর তিনেক আগে একটা মুক্তযুদ্ধের সময়
তেরোই আগস্ট রোজ শনিবার সিংহের
চোখের সামনে আরণ্যক ক্যানভাস, চিত্র, অলৌকিক ভুবনে দারুণ
পরিক্রমণ
করছে রণ ও অশ্বারোহীবিহীন একটি রক্তিম সপ্তাশ্ব
সিংহটা হাঁ করে না
চোখের পাতা ঝাঁকানি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে
গড়িয়ে
গড়িয়ে পড়ে
অশ্রু
অশ্রু থেকে বেরিয়ে পড়ে ১০ কোটি কফিনে চাদর,
৭ টি নক্ষত্র
ও ১ টি শব্দ
তখন
কয়েকটি বিখ্যাত সার্কাসের ক্লাউন বিদ্যুৎ গতিতে নক্ষত্র ও
শব্দের বদলে
এসে কুড়িয়ে নিয়ে যায় কফিনচাদর-ঘুণ ও টিকটিকির ডিম
পরিপালক জহ্লাদের চাবুকে
দুর্দান্ত সিংহের হুংকার-অশ্রুও বন্দি হয়ে যায়
জেগে থাকে হিমযুগ এবং জাগরণ সংহিতার শ্লোক ।
কমলিনী ভালোবাসার ছায়াপথ ও কমলাকাঁটার রস
উত্তম পুরুষদের জন্য রেখেও যেতে পাড়ি বিষাদামৃত যোগের
জ্যোতির্বলয় ঘেরা উজ্জ্বল অক্ষর
নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার জানতে পারলে যা হয়ে উঠবেই
মণিতন্ত্রভেদী এক
অব্যর্থ বাণ ও উত্থান
অনেকই জানবেনা, কেউ কেউ জানবে জীবন ধারাপাতের সমতট
বিস্তারের দ্বিস্তর,ত্রিস্তর
একটু এদিক-ওদিক হলেই যার শাস্তি অনিবার্য পতন, অথচ মূল
ভৈরবীতে মন্ত্রমন্দ্রিত শ্লোক ও আজান
সবই সমান সমান
শব্দের এরকম গুপ্তমন্ত্রের জীবন বিদ্যুৎবীজ চর্যার লোকায়ত
বা
অলৌকিক চমক কোনও যন্ত্রেই ধরা পড়ে না
সবই সমান সমান বা এপিঠ ওপিঠ যুধিষ্ঠির বা শকুনির তাস ও
পাশার দান
একজন সফল বা অসফল কিষাণ বা কামিনের জীবন দিয়ে সবই
দিয়ে যেতে পারি, কিন্তু কাকে দেবো
এই অমৃত-বিষাদ যোগের গুপ্ত মন্ত্র রাখার পাত্র কোথায় পাবো ?
এই অদ্ভুতেড়ে জনারণ্যে আকাঙ্খিত একলব্য কোথায় খুঁজতে যাবো?
দুঃসাহসী দূরাকাঙ্খা সফল করতে সভ্য কেউ হবে, অসভ্যও হবে
কমলে কামিনী হয়ে লৌকিক ভালোবাসার কমলিনী
শব্দতন্ত্রে বন্দি আমি, তুমিও বন্দিনী
‘এইসব ঘেঁষক্যাচালির ম্যালা ফ্যাচফ্যাচ রাখুন তো
শঙ্খপল্লববাবু
ঢের হয়েছে, এবার থামুন ,
সারাদিন তাঁত চালিয়ে, ক্ষেত নিড়িয়ে এখন দারুণ ক্ষিধে
পেয়েছে, বিশ্বাস করুন,
পারেন তো এক থালা গরমভাত দিন, নিদেনপক্ষে কড়কড়ে হলেও
চলবে, সঙ্গে দুএকটু লঙ্কা ও নুন
আবার যদি চোখের জলকেই নুন করে জল দিয়ে পেট পুরতে হয় তা হলে
এবার হাবু টাইট করে এক্কেবারে মশলা বানিয়ে ছাড়বো গুঁতিয়ে
গোয়ালে
জান জেরবার করে দিলে ‘বা’ জান-‘বা’ জান করে চিৎকার করলেও
কোন কাজ হবেনা’খন ।‘
সর্বত্রই সংকর রক্তের ছড়াছড়ি আগে কিংবা পাছে ।
দাদাদের ধরাধরি ছাড়া আর কি কোনও কায়দা জানা আছে ?
জেনে রাখলে উপকৃত হবেন,
যার টাকা আছে তার কমলও আছে,কমলিনীও আছে
যার টাকা নেই তার সবই ফাঁকা, এক সিকি বাকিরও ভরসা নেই, বড়জোর
চাকা ও চাকতি ঠ্যালার তাগদ আর আতেলা গতর ।
আগামী বুধ সন্ধ্যায় এক সন্মেলনে সভাপতি হবার আন্তরিক
আমন্ত্রণ ছিল
যেতে পারতাম কিন্তু কেন যাবো ?
জেনে শুনে কেন এতোসব যথার্থই খিস্তি খেউড় খাবো,
আমি কি প্রতিশ্রুত রিগিং মন্ত্রী যে, যে-কোন জন্তুর চেয়েও
আমার
চামড়া এতো ভারী
যাদের দরকার,দরকার আছে তারাই এবার করুক কাড়াকাড়ি
আমি বরং থেকে যাবো স্বেচ্ছামৌনী মুদ্রিত নেত্র
ময়দান তো খালিই আছে, হোকনা আবার নতুন কুরুক্ষেত্র ।
অনেকদিন ধরে ভগীরথ রিয়াং এর সঙ্গে দেখা নেই ,সেও আসেনা
আমিও যাইনা
এবার শীতে ভগীরথের গ্রামের বাড়ি যাবো
সেখানে গিয়ে কমলাকাঁটার বুনো রস খাবো ।
আমার সংগে ভালোবাসা-কমলিনীকে ছাড়া আর কাউকে নিতে চাইনা
গ্রামের গাছ-গাছালি আর পাখিরা আমাকে চিনতে পারবেতো?
কুছ পরোয়া নেই, কমলিনীতো সঙ্গে আছেই,
যাকে বনের বাঘ ও বাঘিনীরা এখনো মা বলে ডাকে ।
কোন রোষ-ফোঁস নেই, শুধু ভালোবাসাই একমাত্র সাঁকো,
সবাই প্রস্তুত থেকো উত্তরপুরুষের দল-উপদল
আমার শব্দের রন্ধনপ্রণালী আমি আমারই কাছে রেখে দিয়েছি
একেই কখনো বানিয়েছি রাইফেল, কখনো পলির গঙ্গাজল ।
মায়ের আঁচলে চোখের জল মুছে গুড়মুড়ি খেতে খেতে
আমি আবার বর্ণবোধ পড়তে চাই ।
ব্রহ্মবিদ্যালয় দফতর
বৈশাখী ভরাট দুপুরে শরীর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে কামার্ত এক
মোষ
গেল রাত আমাকে হেলায় জাগিয়ে কীরকম হু-হুংকার স্ফূর্তির
তরজমায়
ঝটপটাং উদ্বাহু নেতা করে গেলো দশ দশটি দ্রংষ্টা করল উলঙ্গ
কালীমূর্তি
আমার ভালোবাসার অহংকার চূর্ণ করে রাস্তায় ছড়িয়ে দিলো
ভ্রমরেণুর, তুষ ।
সেই ঝটকায় ভুলে গেলাম সোহম ও সোহিনীর কাছে শেখা শৈশব
সান্নিধ্যের অ-আ-ক-খ
তখনই আগাপাশতলা চিন্তা না করেই মূল্যবান দলিলকে কাগজের
পোটলা
বানিয়ে ফেলে দিলাম আড়িয়ালখাঁর ঘূর্ণিজলে
বকুল পারুল দুকুল হারানো এক অনাথ বালক আমি তলিয়ে গেলাম
কাজরি জলের আরেকটু অতলে ।
আমাকে টেনে তোলবার মতো কোনও হাত নেই, শুধু ভূত ছায়ার মতো
দেখলাম
সোহিনীর করমচা আঙুল
সাততলা দালানের কুটিল কলের স্প্রিং ও একটি বিষ-রসের মেরুন
দেরাজ
মগ্নবাসবদত্তা ও কুমারসম্ভবের স্বপ্ন ভেঙে গেলে কারো কি
মৌনী থাকে সুশান্ত মেজাজ ?
উত্তরাধিকার ভেঙে চুরমার হলো বলেই সত্ত্বাহীন উদ্বাস্তু ও
কাঙাল অনাথ
সঙ্গীত ও সহমর্মিতার ভান করে কী যেনো আমার মুঠো ভরে দিয়ে
গেল এক সন্ন্যাসী ত্রিনাথ
আর তখন থেকেই ব্রহ্মবিদ্যালয়ের দফতর হয়ে এখন বেশ আছি ।
কল্কি টেনে অপরাজিত ভোলানাথ, দিন-রাত কল্কি সাজাই
স্কুল শুরু হতে না হতেই অনায়াসে স্বরোষে দমাদ্দম বারোটার ঘন্টা
বাজাই
বোবা মুখ, পাথর বুক এর ভেতরই কে যেন কান্নার সুরে সারাক্ষণ
মন্ত্র জপে ‘মা-মাগো-মা’
কেউ আসেনা অন্ধকার বটদালানে, বারুন-গুলি-রক্ত-ক্ষত
আধমরালাশ
তখনো বেদানা চুষে পহ্লবী ফিচকে হাসে,
পদশব্দ শোনা যায়,তবু কেউ আসে না
আসলে অনাথ কাঙালের বেকসুর খালাসের জন্যে কেউ নেই
তবু চর্মভেদী কান্নার শব্দ ভেসে আসে হাওয়ায়-‘মা-মাগো-মা’ ।
অস্ত্র তৈরির কাজ বন্ধ থাকে অলস মরশুমে
নাইলন ছাতা হাতে বুকের ভেতর অবিকল হেঁটে যায় ডারলং রমনী
যেরকম চতুদর্শী জ্যোৎস্নায় রাস্তার পিচে বৃষ্টিগাছের ছায়া
হৃদয়-আরক নিয়ে দুলে ওঠে
আমার ভেতরও শব্দের হাঁটাহাটি অনেকটা এরকমই
কখন বা শব্দ বিশাল মিছিল-নিশান নিয়ে শব্দ করে
আমার
খাবারের থালা গেভা মাংসের ঝোলে ছেয়ে যায়
আমি ফালি ফালি করে শব্দ রেখে যাচ্ছি, শব্দের ভেতর কোথায়
শব্দ সোনালি সরোদ
বিষাদ গাছের কোথায় ইউরেনিয়াম নারী ও লীলাঙ্গদা
বিদ্যুৎচ্চমকের
মতো লুকিয়ে থাকে
সবলপুরুষ পরাজিত হলে মৌরি-পাপড়ির মতো ছড়িয়ে পড়ে
নারীর
আঁচলে
আঁচলে-রুমালেই যেন ডুবে আছি তবু আঁচলজীবী নই
আমরা
কজন হুংকারী সেবক
সেতারে আঙুল দিয়ে লতিকা-ক্রিকেট খেলি বিলেতের মাঠে
বুকের
সমুদ্রে বাজে বেতার
আলাপ ও ঝালা নিয়ে আফ্রিকা-কন্ঠে ডেকে ওঠে কোনও এক
কবিতাপুরুষ
মরিয়ানি নারী ও পুরুষ অলৌকিক গর্ভের সঞ্চয়ে শুধু জমা করে
যায় শব্দের শেকল
এরকম শঙ্খনীড় গারদে আনুগত্য ও বিদ্রোহ দুটোই ভালো
আমি সকলের চোখের সামনে দুটোর মাঝামাঝি এক ব্রিজ
থেকে
উঠে এশ্চি
ব্রিজের নিচে নিজের মুখ, মুখে কোনও আয়না নেই অশ্রু নেই অথচ
ভাবতে
খারাপ লাগে
জলের ভেতর মুখ ডুবে যায় ছায়া ভেসে থাকে
সামনের নারী ও গাছের চেয়ে জলে ছায়াপ্রতিমার খেলা
চাকরির
চেয়েও যেন লোভনীয়
আমি উপনিষদীয় সুন্দর আর লোভের এক বিঘত ফাঁক গিলেই কতোদিন
কতো-কতোদিন
হয়েছি মাতাল
ইস্কুলের জামা ও নাইলন ফ্রকের বয়েসে জানিনি দূরের আকাশ
কখন আদিবাসী গ্রাম আর কমলাগাছের পাতায় মেশে না
আকাশ
ও আদিবাধী নীলের মিলন কাতুকুতুর মতো
নারী
ও শব্দের সাথে মৃগতৃষ্ণিকার মতো মিশে আছে
ঠিক সমপরিমাণ শব্দের দূরত্ব নিয়ে আমাদের প্রিয় নারী ও
বন্ধুত্ব
তুলে
নেয় শয়তান বাগানের জামরুল এলাচ
আগামী কয়েক শতাব্দীও নারী আর বন্ধুত্ব কবিদের জন্য
সযত্নে
সাজিয়ে রাখবে নিষ্ঠুর এপ্রিলের ফুল
আঁচলজীবীর মতো চশমার চোখ নিয়ে তাকাই আকাশে
আকাশ কি মেশেনি কোনওদিন পাহাড় চূড়ায় অথবা
পার্বতী
রাজধানীর রমনী-মিছিলে ?
নারী ও বন্ধুত্ব তুমি বার বার শব্দের দূরত্ব নিয়ে বেঁচে
যাচ্ছো
গোলপাতার প্রকৃতি ভেদ করে জেগে ওঠে বৈজ্ঞানিক ধাতুর তোলপাড়
যে-নারী প্রিয় ছিল এতোদিন যে-বাগান প্রিয় ছিল কাল
আজ
আমি যাই না সেখানে
একান্ত
বন্ধুও আজ শত্রু
দুর্দম একগুঁয়েমি দিয়েও ফেরাতে পারিনি অমল কলহ
আত্মাকে লক্ষ্য করে স্বপ্নের মাঠে মারাত্মক হাইকিক
বার
বার পোস্টে লেগে ফিরে এশ্চে
আমারই স্বপক্ষে আমি নিজে গোল করে ঈশ্বর, আমি ও তোমার
মতো
পরাজিত
কখন নাইলন পুতুল আর নেপথালিনের গন্ধে আবিষ্কার করি
রোশনাবাদি
শাড়ি জগদ্ধাত্রী মন্দিরের ফুল
সারস-পুরোহিত
আবিষ্কৃত হয় বিপ্লবী আঙুলে গোমেদ ও ভবানীপুরের জমিদার
কুমারী
আজ
মনে হচ্ছে আমাকে অনন্ত একজীবন ধর্ষণ করে গেছে
দাঁতাল চাঁদ টেরেসের ভেতর থেকে ঘরবাড়ি গাছপালা
দরবেশের
মাজার মোহরাঙ্কিত আফগান রমনী
এবং
কুরুশে-বোনা রক্তঝুঁটি আখরুট শালিখ
সোনার মতো নারী ও বন্ধুত্ব ছাই হয়ে যায়
অথচ ছাই হয় কী করে ?
প্রিয়
দিনের ঘুমও হয়না বলে
কেরিকাটা কৃষ্ণসার ও খয়েরি রাজহাঁস
অরণ্য রাত্রির অনিরুদ্ধ নির্জনতা ও নীলাঞ্জনার প্রতি
মৌলিস্বরের ব্যক্তিগত অধিকার ও
সেতুবন্ধ তছনছ করে দিতে যুগল মানুষের পেছনে লেলিয়ে দেওয়া
হয়েছে
আণবিক বানরবাহিনী । উজ্জ্বল রমনী নির্বাক গাছপালা ও
প্রয়াগের গৃহস্থ সন্ন্যাসীদের
মনোহর কাহিনী শুনতে শুনতেই ওদের কুলুমানালি যাত্রার সম্ভোগ
ও সমাধি
শেষ হয়, কবি ও প্রেমিক মানুষের পেছনে লেগে রয় বন্ধু ও
শত্রুর ঢিলাঢিলি, মালা,
শব্দের তির ও এক তৈমুর হাততালি ।
আণবিক বানরবাহিনী ছেয়ে থাকে মানুষের সহজ যাতায়াতের সীমান্ত
পথ
বাহিনীর সদস্য ও সভাপতি জানে না, এখন কোনও মানুষেরই এক
টাকার সমান
সমান সম্পূর্ণ জীবন নেই, ভাংতিরও আকাল, অচল হয়ে পড়েছে
পুরোনো আদি দু আনি।
সিংহাসন কাড়াকাড়ির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে বত্রিশ কোটি পুরুষ ও
রমণী।
আর্মানিটোলায় সে রকম নিরপেক্ষ জ্যোৎস্না নেই, মানুষের ভরসা
এখন গণেশের ফটো ও হরিশ গিদোয়ানি ।
একজন মানুষ আরেক মানুষের জন্য ফটকের সামনে যুক্তকরাঞ্জলিতে
দাঁড়িয়ে নেই,
কোনও বিরাট পুরুষের অপেক্ষায় খালি থাকে না বত্রিশ সিংহাসন
এক পেট খাবারের জন্য ঈশ্বরের গতর খাটিয়ে তিন চারটে ময়লা
নোট রোজগারও
দুষ্কর হয়ে ওঠে কোনও কোনও দিন ।
জোটে না কিছুই, একটানা নাকে খৎ দিয়ে হামাগুড়ি খেলে খাওয়া
যায়
বদরমোকাম থেকে হাড়গলির বটগাছতলার ধুলোট ছনবন
নারী ও নির্জনতা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য ব্লুপ্রিন্ট তৈরী হতে
থাকে
মানুষ অনেক সময়ই তা টের পায় না, কেননা রাজার নজরবন্দি
মানুষ কাঁচা
ঘুমের আরাম তাকে শুয়ে থাকে নিরিরবিলি সুখের মৌচাকে
নগর,নারী ও নির্জনতা চলে গেলে সব মানুষই আরও বেশি গরিব হতে
থাকে,
নিঃস্ব হয়ে যায়, উল্টোডাঙার ইঞ্জিনের ধাক্কায় সীতাকুন্ডের
রেল ফেটে যায়
রাইফেল ও খাকি পোশাকের মানুষের অবাঞ্চিত ও বর্ধমান
নজরদারিতে নষ্ট
হয়ে যাচ্ছে মহিন মানুষ ও সহজ পাখিদের সমবেত গান, ফুলমেলা ,
সুখের
সাথসংগ, যুগলবন্দি ও অনন্য সহবাস
এসব এড়িয়ে তবু মানচিত্রে কেরি কাটে কতিপয় কৃষ্ণসার,
মৌটুসি ও রানির দিঘির খয়েরি রাজহাঁস ।
ফরমিকা আস্তরণেশুয়ে আছি গুর্খালি লাশ
নত নয় উদ্ধত নয়, এ কেমন গুর্খালি লাশ চলাফেরা
শুধু
ধ্বক ধ্বক হৃদয়পিন্ড নিয়ে টিকে থাকা
আচমকা বন্ধুর চিঠি চরম নিভে যাওয়া অথবা চরম উত্থান
আমি যেন সেই ঘোড়া মার্কা দেশলাই কাঠি হঠাৎ জ্বলে গিয়ে যে
একটি
চারমিনারও
পোড়াতে পারে নি
ইলিক-ঝিলিক করে দেশলাই নিভে যায়, কিছুক্ষণ জ্বলে থাকে
মাথার বারুদ
মৃত্যুগর্ভে লীন হয়ে ছাই হয়ে যায় তারপর হাড়গোড়ে শির শির
বৃষ্টির জল
বাক্স
ও কাঠির বারুদ দুই-ই ভিজে পুতানো ত্যানা
বর্ষার আকাশ গুদামে মাতাল কদম্বকেশরীর গন্ধ ও দুর্গম
পার্বত্যাঞ্চলে খাদ্য-সংকর
দুটোই
সমান মূল্যে কিনে নিচ্ছে সংবাদ –ব্যাপারি
বিদ্যুৎ
পাখার নিচে নৌকো ও পালকির মতো মন্দাক্রান্তা আলাপচারিতা
এখন আমাদের ডিনারের ফরমিকা টেবিলে এসে দোল খাচ্ছে বন্যার
যুবতী লাশ
ইমারতের ইঁটে এসে ঠেসে যাচ্ছের সুর্যদিঘল খরাক্রান্তা
কামিনী শরীর
প্রতিবাদ
শোনে না কালান্তক বিন্দুচক্র
জাতীয়
বিপর্যয় ও ভারতীয় ডাক টিকিটে সবুজ বিপ্লব দুটোই ঘটে যাবে
মানবের দেয়াল ও ঘড়িবাড়ি ডুবে যায় সুখ ও দুঃখের গানে
বিজ্ঞানাগারের সিরিঞ্জে রক্ত নিয়ে ফোঁটা ফোঁটা খেলা
হাউই পটকা নিয়ে শব্দাচার্যের বিপ্লব টিনে পুরনো পুলটিশের
মতো হেসে যাচ্ছে
সশব্দ প্রতিবাদে লাথি মেরে নিজেকে শেষ করার মতো বুকের পাটা
আমাদের কারো নেই
বহুদিন প্রচন্ড পদাঘাতের শব্দ শুনিনা
আমি এক পুতানো দেশলাই কাঠি যেন জ্বলিনা আমিও
ন্যাংটো বয়সে মাঝরাতে মায়ের হাত ধরে বারান্দার কাছাকাছি
পেচ্ছাপের
পবিত্র
স্মৃতি নিয়মিত মতো মনে পড়ে
তুমি শালা কবি মুক্তারবাচা কিছুই করতে পারোনি না বন্যা না
সবুজ বিপ্লব
ব্রহ্মজ্ঞান-মণিকান্ত প্রতিভা অলৌকিক দাহ্যশক্তি ও
সৌরপুংক্ষমতা
সবই
অপ্রমাণিত থেকে যায়
মিহিদানা ছেনালি পুরষ্কার ও পৃথ্বীরাজের যাবতীয় পবিত্র
প্রচেষ্টা এসে গিলে খায় দুঃসময়
আমি কিছুই ঠেকাতে পারিনা, নত নয় উদ্ধত নয়, এ কেমন গুর্খালি
লাশ ।
কুলকুচির বিষাক্ত গরমে নামহীন
কবিতার কথা ভাবছিলাম। বিকেলের রক্তাক্ত নোঙরে গোটা পৃথিবীর
জীবদের যৌনতা
আমাকে পাশাপাশি পাগলা গর্তের ভেতর না ঢুকিয়ে ছাড়বেনা। আমি
যতই পালাতে
চেয়েছি ততই আমাকে ওটা ছুঁবে বলে ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো তেড়ে
আসে । যৌনতা পিচুটির
মতো লেগে থাকা তোমাদের সমস্ত শরীরে আমার ঘৃণার বিস্তার।
বানানো সুন্দর কুৎসিত, একবারে কুৎসিত ভীষণ। রাংতা বা নামহীন তেমন কিছু কামড়াতে
কামড়াতেই আমি কবিতার কথা ভাবতে পারি ।
মানুষের সমস্ত শরীরে যৌনপ্রদাহ। দুপুরের, জ্বলন্ত দুপুরের
মদের নেশার স্রোত নেশার চেয়ে অধিকতর নেশায়। গায়ে-হাঁটা মেঠো পথে গাঁজার সন্ধান।
গুর্খাপল্লীর সন্ধ্যের চেহারাটাই একটা গাঁজা আধ কাপ ভয়ানক মদ । সমগ্র পল্লী জুড়ে জীবনানন্দের কথা
হলে ওখানেও গেরিলা সৈনিকের মতো যৌনতা একটানা অসহ্য ভুর ভুর
গন্ধে চালান করে
দিতে ব্যস্ত থাকে নর-নারীদের পৃথিবীকে। আর ঐ চালাচালি
ব্যাপারটার মধ্যে আমি বুঝতে
পেরেছি, খুবই বুঝতে পেরেছি এই যৌনতা এই যৌনকাতরতা এই যৌন
স্পর্শতা আমাকে
পাশের পাগলা গারদে টেনে নেবে। একটা রাংতা বা নামহীন তেমন
কিছু কামড়াতে কামড়াতেই আমি কবিতার কথা ভাবতে পারি ।
এই ধরনের বাজী রাখা ছাড়া তাদের হাতে কোন কাজ নেই । সব কাজ
ফুরানোর শেষে এর চেয়ে সাধ্যও তোমাদের কিছু নেই। কিছুই অন্ততঃ এই হাসপাতাল পৃথিবীর।
সারাক্ষণ
এই একই যৌন পাগলামোর প্রতিযোগিতা বা শয়তানি আমাকে শেষ করে
দেয়ার অকপট ষড়যন্ত্র। যৌন অর্কেষ্ট্রা। ততক্ষণ হাতের শিরায় তেজী ঘোড়ার দৌড়, উদ্ধত
চেহারাটায় কাঁটার আঘাত। একটা রাংতা বা নামহীন তেমন কিছু কামড়াতে কামড়াতেই আমি
কবিতার কথা ভাবছি ।
ঘোষিত নপুংসকতা তোমাদের মহান পৃথিবীর যৌনতার অসহায় শিকার।
যৌনতার পোকা-মাকড়গুলি তুলে নিলে মানুষের নাছোড়বান্দা প্রেমগুলি ধুনুচির চোকলের মতো
ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। ইচ্ছা হলেই একটা ব্লেডের আঘাতে যৌনতা উৎখাত হতে
পারে। না হলে ডোবার ইচ্ছে ডুবতে পারো হাসপাতাল পৃথিবী।
একটা রাংতা বা নামহীন
তেমন কিছু কামড়াতেই আমি কবিতার কথা ভাবছিলাম ।
নিষিদ্ধ শব্দের বাগানে স্বাধীন নিশান
এরা জীবনানন্দের চিল নয়,চিত্রকূট গৃধিনীও না, মরালাশানুসন্ধানী
কার্তিকের শকুন
লাল জল,পচা ডগার দেড় ফুট ওপরেই নবান্নের ধানের মঞ্জরী আলাপ
অথবা ধুন
এদের কাম্য নয়, এরা খোঁজে পচা মাছ,গরু ও মানুষের গলানো দেহ,
না
পেয়ে খুঁটে লিক ও উকুন
নিম-নিশিন্দা জলকলশের শাদা ফুল থেকে মধু সংগ্রহকারী
পাখিরাও
আজ ওদেরই মতোন
উন্মত্ত বিকারের শিকার, উকুন ও লিক বাছাবাছি করে
দুপুরের
নিলাম ঘুমে বাড়ায় ভুঁড়ি ,
অম্লান আবেগের বিজ্ঞাপন,প্রচারে ও প্রসারে
আমরাই
ওদের বানিয়েছি গোলাপসুন্দরী
এখন দাঁতে ও ঠোঁটে লেপ্টে থাকে জৈনপুরী খয়ের,
রেশমবাগানের
পিক ও রেস্তার চুণ ।
ওরা জীবিত মানুষের মাংস ও খুন খুব ভালবাসে
অথবা
নিজের হাতে নিজেরাই খুন হতে
ভালবাসে বলেই ওরা এতো চৌমুহনি-ঢং ও ইন্দ্রনীল ছাপার মতো
হাসতে পারে
ফৌজদারী ওকালত নামার স্বাক্ষরে এবং সোয়া বিঘৎ চন্দ্রবিন্দু
নাকের খৎ-এ
ওরা হাঁসের সাঁতারের চেয়ে ভালবাসে কাছিমের ডিম
ওরা
নাচে হিমযুগ গুহার পাহাড়ে
এদের কোনটা পদ্মাপালক, কোনটা যমুনাঠোঁট,
মোহনাই
বা কোনটা বলা খুব মুশকিল
ওদের নারিঙ্গী হাসির খিলখিলানিতে সুষুন্মা ও সহস্রদলপদ্ম
নেতিয়ে আছে
ইস্পাহানির মরচে পড়া লোহার বিশাল গরাদ, কাঠকড়ি ও
বৃহদারণ্যক গ্রিল ।।
ওরা যেমন পিলপিল করে বাড়ে, ইতিহাসের খিলান গম্বুজের
সাঁড়াশি ইটের চাপে
মরে ছারপোকার চেয়েও চেপ্টা, চেপ্টা হয় জিলানি পিলানির এক
অপ্রতিরোধ্য
কালো
আঁচড়ে ।
আমি ওটাকে কোনদিনই দেয়াল ও কাঁটাতারের বেড়া ভাবিনি, ভাবিনাও
আর
আলো থেকে অন্ধকার ,অন্ধকার থেকে আলোয় আমি সব সময়ই গুপ্ত ও
মুক্ত
মুদ্রায়
শুনে যাচ্ছি অন্নদাশঙ্করের জয়ন্তী সেতার
কালির
আঁচড় যে কোনও দিনই মুছে যেতে পারে
এখন
তো শুধু সময় ও প্রক্রিয়ার ব্যাপার
ব্যবধানে বিষাদ এলেও সেই ভালবাসা থেকেই ঘৃণা আর সেই
প্রচন্ড
ঘৃণা ও উপেক্ষা থেকেই গোলাপ বাহারের ভ্রূন ও শিশু জন্ম
নিয়ে বসে আছে
কবিতা
শব্দের কাছাকাছি বৃষ্টিফুল ও কুয়াশাপাতার বাহার ।
এখন এই মূর্হুতে বহুদূরের যে নক্ষত্র, যার আলো এখনো
পৃথিবীতে আসে নি
এখনও কবিদের শব্দ-বর্ণ ও বাক্যমন্ডলের আলোতে সে সেরে নিছে
নক্ষত্রস্নান
এমন নিশ্চিত লক্ষ্যে তূণের দরকার নেই অথবা অনিবার্য গুপ্ত
কোনও বাণ
একটা নষ্ট হলে আরেকটা বাগান কবিরাই শুধু বানাতে পারে, মিহিযান
শেফালি
সোহিনী-মোহিনী –ললিত চেতনার গোলাপবাগান
আমার
শব্দেরা এখনও অজস্র বাগানের মালিক
যেখানে লিকপিক-উকুন-উল্লুক, কার্তিকের লাশ খোঁজা শকুনের
কোনো
প্রবেশাধিকার
নেই ।
কবিতার শব্দে আজ যা বলে তাই মন্ত্র হয়, শতাব্দী পরে হলেও
তাই হবে
তবে কোনো সম্রাট, রাজা বা সে যেই হোক না কেন
কবিদের রাজ্যে কোনো সীমানা ,দেয়াল বা কোনো নিষিদ্ধ এলাকা
নেই ।
ভালোবাসার গরিয়া ভৈরব
ভালোবাসা জানিনা বলেই আমি চিরকাল এক উদ্ভট পাষাণ, যার কাছে
গ্রহণের চেয়ে আজীবন প্রিয় থাকে সপাট ভাসান। বাল্যকাল ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে আমি এক জ্যোতির্ময়ী
প্রতিমার কাছে ভালোবাসা শিখতে গিয়েছিলাম, সেও স্মিতহাস্যে হাতে তুলে দিয়েছিলো
বিষাদবীজ ও মৃগতৃষ্ণিকার এক হিজিবিজি অক্ষরের সচিত্র বর্ণলিপি। আমি সেই বর্ণাক্ষরের বুড়ো, এখনো নাবালক
অজ্ঞ হয়ে যাত্রাপুরের মাঠের ভূতের বাতির পেছনে ধাওয়া করে নির্মল কাঙালের মতো পথ
হাঁটছি, দেখছি বড়জাগুলির মোড়ের তেঁতুল গাছের নিচে পরিদের নয় দরোজা, আটচালার ঘরের
পর ঘর। যশোদলপুর ইস্টিশানে কোনও এক ভোরের কুয়াশায় মেরুন ওড়নায় ঢাকা গ্রিসরমনীর মতো
যাকে দেখেছি তাকে কি আর দ্বিতীয়বার দেখা যায় ? ভালোবাসা তবু টানে, পদ্মের পাপড়ির
মতো বাগময় হয়ে ফুটে ওঠে চন্দন ও ঝর্ণার বিস্মৃত জীবন ।পিয়ানো বাজাতে গিয়ে হাতে হাত
লেগেছিলো বলে ওরাই আমাকে ম্যাগনোলিয়া ও ক্যামেলিয়া গাছের পাশ দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে
ব্রহ্মপুত্রের তরঙ্গায়িত জল স্পর্শ করে জলের ঢেউ ও সাপের দাঁত গুনতে শিখিয়েছিলো ।
এক নির্বাক শিহরণে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম আমি । ভালোবাসার কোনও বৈধ ও স্থায়ী
কর্তৃপক্ষ নেই বলে সে আমার মতোই এখনো ছিন্নমূল উদ্বাস্তু। মালিনী ও মালঞ্চের মতো
চঞ্চল, কোথায় থাকে, কোথায় হারায় কাকে খায়, খায় না কাকে, তার কোনও ঠিক ঠিকানা নেই ।
আবার ঠিকঠাক ঘাপটি মেরে থাকে সব কিছুতেই। মুক্তাগাছার রাজবাগানের জামরুল বাগানের
ভেতর এখনো পদ্মপাপড়ির মতো শরীরের তরঙ্গ ও তারায়, প্রকৃত জ্যোতির্ময়ী রূপ মেলে ধরে
বসে থাকে বাল্যকাল ও যৌবনের সেই কমলিনী রায়, কোনও কোনও অমাবস্যা বা কোনও কোনও
পূর্ণিমায় । দেখা যায় নাকি, নাকি তাও সেই রহস্যময়ী প্রতিমার শাশ্বত বুজরুকি ? ভালোবাসা
কি নিষিদ্ধ ফল না ফসল? চন্দন ও ঝর্ণার হাতে ছোঁয়া ব্রহ্মপুত্র কামাখ্যার সেই জল, কী
ঠান্ডা অনন্ত অতল ! সেই জলও না কী তিতাস গোমতীতে কখনো অনল হয় গরিয়াভৈরবের উদ্দাম
ডমবুরের তালে ।
শাখানটাঙের সরোদ ও ত্রিকালগণ্ডকীনাগ
সকলেই ভাবে জন্ম ও অস্তিত্বের রক্ত ও জরুল দাগ মুছে ফেলে
একা একাই
চলে
যাবে আত্মগোপনকারী রেলে চড়ে বাঁকাল পথে
চুপচাপ নৈনিতাল
তিতাস তরঙ্গের কালভৈরবী ভৈরবের পুল ও পাতালের পাপ
কর্কটনাগের ফণার বিস্তার তাদের খাবে না
লোকায়ত মানচিত্র ছাড়িয়ে সবাই অলৌকিক ভ্রমণে যাবে
এই ভাবে টেঁকা যায়না সকলেই খাবে
ভূমধ্যসাগর পাড়ের চতুর্মুখী ফল ও রোয়ালি ফসল
সকলেই অলৌকিক ভ্রমণে যাবে সংহিতা ও শৈবাল সকলেই
দুপুরের আহারে খাবে আফগানি বাগেশ্রী ও মুলতানি বাহার ।
কেউ সোজা পথে হাঁটে কেউ চড়ে বসে উল্টোরথ
শমীক ও শর্মিষ্ঠা এবং আমাদের সকলেরই ঘটে ও আঘাটে
আপাতত লক্ষ্যপথ ও সমবেত পদযাত্রা
সাতকড়ি চিতের সাফল্যে ফেভিকল-আঁটা
অপাপবিদ্ধ কৈশোরের গোলকধাম
চৈতন্য ও বাঁশরি এবং আমাদের প্রত্যেকেরই মৌন ও বাঙময়
ফড়ফড়িতে ব্যক্তিগত পবিত্রতা ও পরিত্রানের আইফ্যাল টাওয়ার
মনুমেন্ট ও নিচ্ছিদ্র তাঁবু ও মুদ্রারাক্ষসের জলছাপ
এতো করেও ফুটো হয় জর্জিয়ান টিউব
ফেটে যায় কাস্পিয়ান পাম্প ।
এ কী আদিবাসী রমণী নৃত্যের ফুলকরি করমুদ্রার পদপাত নাকি
অস্ত্রের বিজলির ছুনছান সারাদিন
অলৌকিক সরোদের দরজা দরবারি মিড়ে দারচুই টূংটাই জম্পুই
লুংলে থেকে ঘননীল কালাঝাড়ি হয়ে শাখানটাঙে চষে বেড়ায়
তামাটে মুড়ির টিন বাস
বাসের সিটে বসে ককবরক গান গায়
পাঁচজন রিয়াং ও মলসুম সর্দার
গামছা পেতে খেলে উনত্রিশ রঙের তাস ।
শানানো চোখের মণিকূট ক্যানভাসে হুসেনের ঘোড়া ও ষড়চক্রে
নীরদ মজুমদার কিংবা আরও কিছু ছবি
চদভিকা চাঁদের মতো
কভি না কভি
রামেশ্বরী শাবানা আজমি অথবা ওয়াহিদা রহমান
সেতুবন্ধ ভ্রূযুগলের তৃতীয় নয়নে
চুকচুক শিল্পের আঁকশি হয়ে ঝুলে থাকে, মানে ঝুলেই আছে
ফাল্গুনের মুকুল ও মঞ্জরী হয়ে ওঠে বৈশাখেই সিঁদুরে পাকা আম
কেউ আগে কেউ পাছে সংযুক্তা ও শর্বরী এবং আমরা সবাই
খেয়েছি কিছু না কিছু
জীবন ও কবিতায় শরবিদ্ধ শব্দের হরিনী ও নক্ষত্র রহস্যের
ফলিডল গুঁড়ো মেশানো বাসি ও সতেজ
টসটসে বর্ধমান মিহিদানা
টাকা বা দু আনা চার আনার কেরেঞ্চি কাটা জিলিপি
লালমোহন ও গোলাপজাম ।
একেই কি বিষাদ লে না এক ভৌতিক নিষাদ শিকার করে মানুষের
শব্দ ও হৃদয়
অনির্বাণ ও পার্বতীর ঘরে আমাদের বুকের পিঁড়িতে বসে খায়
তুঁতে সুতোয় বাঁধা ছ্যাঁকা বিড়ি বেনারসি জর্দা জয়পুরি চুন
ও কাছাড়ি বরজের ভারী খাসি পান
পাঞ্জাবিতে প্যারির আতর কন্ঠস্বরে রামপুর ঘরানার লয়কারি
তান ।
সঞ্চিতা ও সিদ্ধার্থ এবং আমরা সবাই হাঁটছি বা দৌড়াচ্ছি
লাইন ধরে রাজা সাহেবের লালফিতেয় মোড়া ফাইলে
কারও সোজাপথ কারও উল্টোরথ
পদ্মিনী শাহবাজপুর গেলে
শ্বেতপদ্ম যাবেই বাঁকাইল
হয় আমরা সবাই সৎ
সুধানুসন্ধানে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত সূর্যমুখী বেশ্যার
ইস্ত্রি করা-চাদরের
মতো নয়তো কোন এক গাঁড়ল নাগরিকতার
তুলনাহীন ইস্পাত অসৎ ।
যে-ই অর্জুন সে-ই বৃহণ্নলা আসলে তলা গলা সবই সমান
কেউ ওপরে উঠেই মহৎ কেউ নিচে থেকে ইতর-ফিতর
কেউ কান দিয়ে ভাত চাটে কেউ চোখ দিয়ে গিলে গান
মানসী ও শক্তির গ্রিসপেশির মাই ঘাই করে
ইস্পাহানি কবিতার ভৌতিক গিবড় ।
হয়তো একটু আগে নয়তো একটু পিছে
অমৃত সন্ধানী রক্তে জন্ম জরুল তিলের নিচেই
আমাদের সকলেরই সংখ্যানুক্রমিক নামের তালিকা
অলৌকিক রঙের কালিতে দাগ কাটা আছে
সকলেই ভাবে আত্মগোপণকারী বৈদ্যুতিক ট্রেনে একা একা
স্বপ্নের ভ্রমণে যাবে নৈনিতাল পার্বতী ও পরাগ
অঘ্রাণে বা মাঘে খাবে মিহিদানা
হঠাৎ ধারালো বাটালির এক ঘষায় বুকের বাইরে
ভেতরে প্যাঁচিয়ে ধরে তিতাসের তরঙ্গিনী বৈশালী ভৈরবী
ত্রিশূলে ত্রিলিঙ্গ ত্রিপট কালীগন্ডকী নাগ ।
অঙ্গীকারের আগ্নেয়াস্ত্র ও রাজার থুথু চাটার গান
ধারাপাতের
জলের মতো সহজ সরল জীবন যাচ্ছে
মহৎ চাকার চাপ খেয়েছি
নিজের হাতেই নিজের ঘরে নজরবন্দি খুলনার ডাব
নলচে খুলে
চিংড়ি মাছের
মালাইকারির জীবনটিবন কাটিয়ে যাচ্ছি
শব্দকে সব
ফন্দিফিকির শিখিয়ে দিচ্ছি তেলের কৌশল
কেমন করে হাতাতে হয়
ইটের পাহাড় নোটের তাড়া নীল সিংহাসন
ভোট দরিয়ার গুদাম ঘরে
এক বিঘত ফাঁক আড়াল রেখে নিজের সঙ্গে প্রলাপ বকি
নিজের ছায়ায় শরীর ঢেকে
এখন জিতে তখন ঠকে শীতের পিচে ঘুরছি ফিরছি
পচাপাটের ঘ্রাণের মতো সহজ সরল জীবন যাচ্ছে
উপনিষদ ব্রহ্মস্তোত্র আত্মাফাত্মার প্রার্থনা গান
ঘাস বানিয়ে গরুভেড়ার জিবে ঠেলছি
কেমন বাহার জীবন যাচ্ছে অন্ধ খাতার বন্দি ঘরে
পুরনো প্রেম নিলাম ডেকে মোমের সলতেয় নিভে পোড়ে
দেরাজভরা ঘুনপোকা আর খুন করিনা ভ্রমর ভেবে
মারুল বাঁশের কঞ্চি ফটক অপরাজিতার ঝুমকো থোকা
ছপছপিয়ে খেয়ে নিচ্ছি ব্রহ্মপুত্রের খোকা ইলিশ
এক শপাঙেই দুপুর ফিনিশ ছাইমাজা থাল হাতের টিপে
জ্বালছে কেউ আকাশপ্রদীপ তাও জ্বলছে টিমিশ টিমিশ
স্ত্রীর জন্য জামদানি তাঁত পচাপান্তা কার্তিকের ভাত
কাশ্মিরী শাল জড়িয়ে বুকে নরম হাতের তাপ পোহাচ্ছি
গল্পগুজব আড্ডাফাড্ডা নিজের সঙ্গেই বেশতো চলছে
গোখর ঠোঁটের ভালোবাসা বিষ পিঁপড়ের কামড়ানো ক্ষত
ভিড়ের ফাঁকে বুকের ভেতর নিজের হাতেই নজরবন্দি
কলস কলস শব্দস্রোতে নিজের শ্মশান ধুয়ে নিচ্ছি
জলের মতো সরলরেখায় তরল-গরল জীবন যাচ্ছে
কেমন করে ডিঙোতে হয় এতোদিনে বেশ শিখেছি ভুজংভাজুং
পাথর ভাঙার ফন্দিফিকির অলিগলি
খিল ও দুয়ার খুলতে শিখেই জুতোর চামড়া বদলে নিলাম
মোষের শিঙার সুখতলিতে মলমল হলো চটের থলি
নিজে নিজেই মাঘটুমাটূম নাচন নেচে সিঁথির রেখার সাপের জিবে
মাদারিকার খেল খেলাচ্ছি
মাঝে মাঝে দুঃখটুঃখ সর্দি হলে নিজের গালেই চড় কষাচ্ছি
পনেরো টাকার বাজার খরচ বিষাদমুদ্রায় থলে ভরছে
জলের মতো সরলরেখায় বর্ণমালার মিত্রাক্ষরে
গুলবাহারি জীবন যাচ্ছে
বাঁদি থেকে বিবি হলাম গোলাম থেকে সাহেব হচ্ছি
প্রাচীন কাঁথা গল্পস্বল্প বন্ধুটন্ধু হলুদ বলে
ছিঁড়ে ফিঁড়ে টুকরো করে নষ্টঝুড়ির পেট ফোলাচ্ছি
এখন আমার আরাম তাকে অঙ্গীকারের আগ্নেয়াস্ত্র
মরচে খেয়ে শুয়ে থাকে দু হাত ভরে মুঠোয় মুঠোয়
রাজার থুথু চেটে খাচ্ছি নোটের তোড়ায়
শব্দ কলম বাঁধা রেখে শীতের লেপে ওম লাগাচ্ছি
মাঝে মাঝে হঠাৎ কোনও ন্যাংটো প্যাঁচা নিমের ডালে
ঘাই করে দেয় শান দেয়া দাঁত ঠোকর কেটে
নিদ্রাযোগের চৈতন্যরাজ মেহগিনির পাঁচ হাজারি
কলকে খাটে হঠাৎ ফঠাৎ ভ্যাংচি কাটে
ভূত বা ন্যাংটো প্যাঁচা এইটুকু যা দ্বিধা বাধার
অশ্রুকূলের অভিমানে লোকেশ্বরীর সঙ্গ পাচ্ছি
নাভি পেটের নাড়ির টানে গোপালপুরের গোলাচঘাটে
রক্তপাতহীন কেমন সহজ যাচ্ছে কেটে
শঙ্খচূড়ের বহ্নিজীবন পাট পচা ঘ্রাণ গন্ধ মেখে
ধারাপাতের সংখ্যা গিলে বর্ণবোধের জীবন যাচ্ছে
সাড়ে তিন হাত মাটির দখল জোঁকের মতো লেগে থাকে ।
*******************************
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment