Wednesday, September 28, 2016
ক্ষিতিশ ও পারিজাত
১
সাধারনের যা
ধর্ম ক্ষিতিশের ধর্ম কিন্তু তা নয়। যুদ্ধ
শেষ হবার
পর থেকেই চারিদিকে রামপাখি
খাওয়ার হিড়িক পড়েছে,
ক্ষিতিশ
কলেজের দিনগুলিতেই রামপাখির কাবাব কিনে আনতো।
পারিজাত অনেক খেটেখুটে
বুঝেছে ক্ষিতিশের ধর্মের স্বভাবটা ভিন্ন
তেমন বিষয়আশয় বুঝলে
ক্ষিতিশ ফলতা লাইনে নিজের ধর্মের
প্রচার করে
আসত। সে ছেলে আজ অবধি কবিরাজি ওষুধের
সেলসম্যানের
চাকরিই জোটাতে
পারল না।আজকাল যেমন
যুদ্ধের বাজার বলেই হয়ত
অসবর্ণ বা
ভিন্নধর্মে বিবাহের চল হয়েছে। ক্ষিতিশের
তাতে মতি নেই।
অ্যাংলো কর্তৃপক্ষ
দেখলেও সে নাম ভাঁড়িয়ে স্বভাব পালটাতে যাবে না।
ক্ষিতিশের ধর্ম প্রকৃতি-প্রত্যয়ের মতই জটিল, জলের মতই
বহতা
খাদ্য আন্দোলনের সময় তার
যে ধর্ম মধ্যরাতের বেতারবার্তায় তা পৃথক
অথচ ক্ষিতিশ
হিন্দুই। হিন্দুপদবীই
তাকে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের উপমার মত
উষ্ণ রেখেছে, শুধু যেন বর্ণহিন্দুত্বের খাঁজে খাঁজে ক্ষিতিশ মুসলিম,
খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ হয়ে পড়েছে
ক্ষিতিশ সেই প্রতিটা ধর্মে
মন দেয়, প্রতিটা উত্তল-অবতল তার প্রণম্য
লক্ষ্য করলে
বোঝা যায় সে কম্যুনিস্ট নয়, বাপদাদার মত কংগ্রেসি নয়।
ছোটবড় ঘটনাগুলি যে
ধর্মবিবিক্ত নয় একথা যখন একটা গোটা দেশ
ভুলতেই বসেছে, মায় পারিজাত, ক্ষিতিশ
সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ার খবরে
কাচা লুঙ্গি
পড়ে যুগান্তরের উপর চপচপে মুড়ি মাখে। ভিয়েতনামে
আইজেনহাওয়ার
লড়বে শুনলে
অদৃশ্য জপমালায় নাপামের পাক দেয়। খাটের
নিচ থেকে
তুলে আনে, ধর্মপ্রচারকদের উপহার দেওয়া গ্রন্থগুলো। কথাগুলো পুরানো নয়,
অথচ ওর মধ্যেই ক্ষিতিশ
ঠান্ডা লড়াই খোঁজে, কামরাজ খোঁজে
পারিজাত নিজের ধর্মের
স্বরূপ সঠিক না ঠাউরালেও ক্ষিতিশের ধর্মের
এই স্বরূপ, স্বাধীন দেশের নিরিখে, প্রকৃত চিনেছে।
ক্ষিতিশ ও পারিজাত
২
পারিজাত আজকাল
প্রায় মধ্যরাতে ফেরে। গ্যাসবাতিও
মলিন, বিদায়
নেবার আগে
শহরের রাস্তায় কিছু উজ্জ্বলতা রেখে যাচ্ছে।এদিকে, ওদিকে
তাকিয়ে পারিজাত দেখে তার
চারিধারে কেউ গাড়লের মত কাশছে কিনা
পার্টিশানের ওপারে সদ্য-সেক্রেটারি মেয়েটি সারাদিন কেশেছে, টিবি নাকি!
টিবি বুঝি, টিবিই তবে, অত সুন্দর
ফুলছাপের নিচে পারিজাত গুঁড়োগুঁড়ো
কাশির দমক
পারিজাত গোটা বাড়ি ফেরার রাস্তা জুড়ে শুনতে পায়।সে পেয়ারা কেনে।
এত ক্ষয়, তাই বুঝি পেপারে-পেপারে
পাতালরেলের কথা, মাটি কাটা শুরু হবে।
অফিস শেষ হয়েছে সাড়ে ছ’টায়, তারপর নাইটে বি. কম, ফিল্মি ম্যাগাজিন
পড়ে সবাই ক্লাসে, একটা ডিগ্রি দরকার, পারিজাতেরও,
ওইভাবে বড়সাহেবের মত
ডেস্কের উপর
একহাত ভর দিয়ে কথা বলবে।ফ্ল্যাটের
গেটে একমুহূর্ত থমকালে
মফস্বলের
চেহারা ভেসে আসে।মন্দিরা
ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্ষিতিশ দরজা
খোলে।মিশচেফ থেকে খাবার বের করে গরম করতে
বসায়। জিজ্ঞেস করে-
রাস্তায় অত কাশির শব্দ কার
হচ্ছিলো, তোমার?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment