Wednesday, September 28, 2016
পঞ্চাশ ও ষাট্ এর দশকের সন্ধিক্ষণের কোনো এক সময়, স্থান শান্তিনিকেতন। শিল্পী ধর্মনারায়ণ দাশগুপ্ত তখন সেখানে শিক্ষানবিশ।
পলাশফুলের স্টাডি করছেন শুনে একদিন এক অধ্যাপক যিনি কলাভবনে শিল্প-ইতিহাস ও
শিল্পতত্ত্ব পড়াতেন, বললেন কাগজের উপর পেনসিল দিয়ে একটি
পলাশফুল এঁকে দেখাতে। সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টিহীন অধ্যাপক কেবল আঁকার শুরু ও শেষে
পেনসিলের ডগাটি ছুঁয়ে দেখেছিলেন। আঁকা সমাপ্ত হলে তিনি বলে দিয়েছিলেন কোথায় কোথায়
ভুল হয়েছে। বাহিরের দৃষ্টিহীনতা ছাড়িয়ে অনুভূতির নির্মাণ ঠিক কোন চরম উৎকর্ষতায়
পৌঁছালে এই সাধনা সম্ভব তা পাঠককে নিশ্চয়
বলে দিতে হবে না। শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকের
শুভনাম বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় (১৯০৪-৮০), শিল্পী-সাধক-দার্শনিক।
.
.
.
'যাক যাবার আগে ছেলের ভাত খাবার ইচ্ছে মিটিয়ে দিলাম।'
মায়ের ধরা গলা শুনতে পেলেন বিনোদবিহারী। সকালেই ডাক্তার জবাব দিয়ে
গেছেন, এ ছেলে বাঁচা-মরার উর্দ্ধে। শৈশবের স্মৃতির ধূসর আলোয়
কথাগুলি মনে পড়ে শিল্পীর। জীবনের শুরুতে
অনেকটা এইরকম গতিপথে ছিল তাঁর। ডাক্তারের কথা সত্য হয় নি বটে কিন্তু হারিয়েছেন
ডানচোখের পূর্ণদৃষ্টি, বামচোখের আংশিক। ফলে জুটেছে মোটা
কাঁচের চশমা আর অনুজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত, অবশ্যই প্রতিবেশী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখে।
দাদাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে স্কুলে যাওয়া পর্বটি ছিল কিন্তু ছিল না বাৎসরিক
পরীক্ষাপর্বটি। শীর্ণকায় শরীরে মেলে নি খেলার অনুমতি, সারাদিন
কেটে যেত অনুসন্ধান অবজারভেশন আর বাড়িতে থাকা বইগুলি ঘেঁটে। ১৯১৭ সালে বারো বছর
বয়সে ভর্তি হলেন 'রবিবাবু'র স্কুলে। ভর্তির সাক্ষাৎকারটি নিয়ে ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
.
.
.
প্রণাম সেরে উঠে দাঁড়ালাম। রবীন্দ্রনাথ স্থিরদৃষ্টিতে আমার
মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন, তারপর চোখ নাবিয়ে পা পর্যন্ত একবার দেখলেন,
আবার আমার মুখের দিকে তাকালেন। প্রশ্ন করলেন, 'ভাল ডাক্তার দিয়ে চোখ দেখানো হয়েছে?' 'আজ্ঞে হ্যাঁ।
মেনার্ড সাহেব চোখ দেখেছেন। ' রবীন্দ্রনাথ : 'এখানে সব কাজ নিজে করতে হয়, ঘর ঝাঁট দেওয়া, কাপড় কাচা, নিজের থালা ধোয়া ইত্যাদি, পারবে ? ' 'আজ্ঞে হ্যাঁ,পারব। 'আমার লেখা পড়েছো ?' বললাম 'আজ্ঞে হ্যাঁ।' তারপর বাংলা, ইংরাজি কি কি বই পড়েছি বললাম। মাইকেলের 'মেঘনাদবধ
কাব্য' ইত্যাদি। 'মেঘনাদবধ কাব্য'
পড়েছি শুনে তিনি বিস্মিত হলেন। তারপর তিনি বললেন, 'তোমার সঙ্গে যিনি এসেছেন, তাঁকে ওপরে পাঠিয়ে দাও।'
... পরে শুনেছিলাম গুরুদেব খুব খুশি হয়ে অনুমতি দিয়েছিলেন।
ব্রক্ষ্মচর্যাশ্রমে ছাত্রদের রুচি মেজাজ অধ্যাপকরা জেনে
নিতে পারতেন সহজেই। গাইয়ে বা লিখিয়ে নয় বিনোদবিহারীর মধ্যে যে আঁকিয়ের সম্ভবনা আছে
তা কয়েকদিনের মধ্যেই গৃহশিক্ষক ও রবীন্দ্রনাথ জেনে নিলেন। অতঃপর সতীর্থ
ধীরেন্দ্রকৃষ্ণের উৎসাহে ১৯১৯ সালে যোগ দিলেন সদ্য নির্মিত 'কলাভবন'
এ। কিন্তু ক্ষীণদৃষ্টির কারণে শিক্ষক নন্দলাল বসুর এই ব্যবস্থায়
কিছুটা সন্দিগ্ধ ছিলেন, আপত্তি তুলেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তখন
বলেছিলেন 'যদি ও নিয়মিত আসনে বসে এক মনোযোগ দিয়ে কাজ করে তবে
ওকে স্থানচ্যুত কোরো না। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা কোরো না। সকলকে নিজের নিজের পথ খুঁজে
নিতে দাও'। উনি আর আপত্তি করেন নি। শিক্ষানবিশকালে শিক্ষক হিসাবে নন্দলাল কখনই পাঠক্রমে কাঁচি
চালিয়ে ডালপালা কেটে সব গাছকে এক ঢঙে সাজিয়ে তুলবার চেষ্টা করেন নি। ফলে সেই সময়ের
ছাত্র রমেন্দ্রনাথ, বিনায়ক মাসোজি বীরভদ্র রাও চিত্রা
মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত ধীরেনকৃষ্ণ প্রত্যেকেই
দিকপাল শিল্পী হিসাবে নিজেকে পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
.
.
.
অসহযোগ আন্দোলনের সময় আমার একবন্ধু আমায় বলেছিলেন যে দেশের
এই দুর্দিনে আপনার লজ্জা করে না বসে বসে কাগজে রঙ লেপতে? কিন্তু আমি নির্লজ্জের মতো সারাজীবন কাগজের ওপর রঙ লেপেই কাটালাম।
আসলে বিষয়টা মোটেই সেইরকম ছিল না। বিনোদবিহারী ছিলেন আশৈশব
অপটু শরীর ও ক্ষীণদৃষ্টির অধিকারী। শারীরিক এই প্রতিকূলতার জন্য ওনার মধ্যে
তাড়াহুড়ো জাতীয় কিছু ছিল না। প্রতিটি বিষয়কে ধীর লয়ে পরখ করতেন, তাই আপাত উত্তেজনা তা স্বাধীনতা
আন্দোলন হোক বা পাশ্চাত্য ইজম (ism) সংক্রান্ত বিপ্লবই হোক
নিক্তিতে বিচার অথবা অনুভবের মধ্যে দিয়ে বুঝে না নিয়ে একেবারেই গ্রহণ করতেন না। এর
ঠিক বিপরীতে পাই রামকিংকরকে, তবে সেই প্রসঙ্গ অন্য কোথাও।
তাই শিক্ষানবিশ পর্ব থেকেই তাঁর রেখা অন্তরমুখী, নির্জনতা
সমৃদ্ধ ও নিমগ্ন। রঙের নির্মাণও প্রায় বর্ণবিরল।
এই নির্জনতাবোধ তাঁর দৃশ্যচিত্রের প্রধান বিষয়। নিজেই
নিজেকে প্রশ্ন করেছেন শিখলাম কার কাছ থেকে ? নন্দলালের
কাছ থেকে, না লাইব্রেরি থেকে, অথবা
শান্তিনিকেতনের রুক্ষ প্রকৃতি থেকে ? উপলব্ধি করেছেন ,
নন্দলাল না থাকলে শিল্পীর আঙ্গিকের শিক্ষা হতো না, লাইব্রেরি ছাড়া জ্ঞান আহরণ হতো না আর প্রকৃতির রুক্ষ মূর্তি উপলব্ধি না
করলে ছবি আঁকাটাই হতো না । একটু গভীরে অনুসন্ধান
করলে দেখা যাবে তাঁর কোনো রেখাই উত্তেজনায় ফেটে পড়তে চায় না, সে বৃত্তের পরিক্রমার ন্যায় কেন্দ্রমুখী। রঙের জৌলুশ উন্মাদনা ধরায় না,
আনে প্রজ্ঞাসমৃদ্ধ চেতনা। পাশ্চাত্য ইজমের সারাৎসার ধীরে ধীরে অতি
সন্তর্পণে মেশালেন ভারতীয় চিত্রদর্শনের সঙ্গে ... জন্ম নিলো এক আধুনিক চিত্রভাষ্য
যা একাধারে একান্ত ভারতীয় হয়েও বিশ্বনাগরিক। তাই বিনোদবিহারী অনায়াসে বলতে পারেন 'শিল্পীজীবনের পরাকাষ্ঠাই আমার চিরদিনের লক্ষ্য। আমি নিজেকে জানতে চেয়েছি
এবং সেই জানার জন্যই অন্যকে জানতে চেষ্টা করেছি'।
এই জানার কৌতূহল তাঁকে
নিয়ে যায় জাপানে (১৯৩৬-৩৭)। সেখানে হংগো, কম্পু আরাই,
সাইচে টাকি প্রমুখ শিল্পী ও দার্শনিকদের সাহ্নিধ্যে আসেন। সেইসময়
প্যারিস ফেরত জাপানী শিল্পীদের দেশজ শিল্পের প্রতি ঝাঁজ অনুভব করেছেন। বিদেশ থেকে
কি নেবার আর কি ত্যাগ করবার তা পরিষ্কার হয়েছে। দেশে ফেরার পর শিল্পীর তুলির
টানটোন ও রঙের ছোপ দেখার কাজের পদ্ধতি অনেকটাই বদলিয়েছেন। এইসময়ে ডাক পড়ল
নন্দলালের সহকারী হবার জন্য, উনি তখন 'হরিপুরা
পোষ্টার (১৯৩৭)' আঁকছেন। এই অধ্যায়ে বিনোদবিহারী নতুন ভাবে
অনুভব করলেন দেশজ 'খেটে খাওয়া লোকগুলির জীবনচর্চা'। ১৯৪০ সালে আঁকলেন বিখ্যাত দেওয়াল চিত্র (Mural)'বীরভূমের
নিসর্গ', ছাত্রাবাসের দেওয়ালে ... দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন সেটা
প্রায় বিনষ্ট। গ্রামীণ ধোপা সহকারী গাধা, গাছে হনুমান নিচে
বন্দুক হাতে শিকারি, ফেরিওয়ালা, কর্মরত
মহিলা, শিশু এমন কি এন্টারটেনার ভাল্লুক পর্যন্ত ... এতদিনের
দেখা বীরভূমের চরিত্র তুলে আনলেন ম্যুরালে
মূর্ত করতে। দুইবছর পরে ১৯৪২ তে চীনাভবনের দেওয়ালে আঁকলেন কলাভবন সহ
বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস জীবন। রামকিংকরের উৎসাহে ১৯৪৬-৪৭ হিন্দীভবনের দেওয়ালে
আঁকলেন সর্বকালের সেরা ম্যুরাল 'মধ্যযুগের সন্তরা', কেন আঁকলেন সেই প্রসঙ্গ চিত্রালোচনা পর্বে করেছি। সেই ম্যুরাল
পরিকল্পনাকালে শতাধিক রেখাচিত্র সৃষ্টি হয় ... কোনোটা পেনসিলে কোনোটা কালিতে কোথাও বা তার সঙ্গে হালকা রঙের ছোঁয়ায়
সুরদাস, দাদু, রামানুজ, গুরুগোবিন্দ সিং, কবীর, তুলসীদাস
উঠে এসেছে রেখাচিত্রে এবং পূর্ণমূর্তিতে।
পরের বছর বেরুলেন আবার ভ্রমণে।
আমেদাবাদ-বরোদা-জয়পুর-বোম্বাই-মুসৌরী হয়ে ফের কিছুদিন শান্তিনিকেতনে। এইসময়ে
(১৯৪৮) নেপালরাজের মিউজিয়ামে কিউরেটারের চাকুরী নিয়ে চললেন নেপাল। অহংকারের বাষ্পে স্ফীত মানুষ যে কত অকিঞ্চিৎ, কত ছোট, কত অসহায় সেটা উপলব্ধি করলেন নেপালে যাবার হিমালয়ের গুরুগম্ভীর গিরিপথে ... জন্য নিল এক
মানবতার দর্শন। ওখানে বছর তিনেক কাটিয়ে ফিরলেন মুসৌরীতে, সেখানে
কিছুদিন থেকে তারপর রাজস্থানে চাকরী নিলেন, সেখানে নেপালের
লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে বনস্থলী বিদ্যাপীঠের দেওয়ালে সৃষ্টি করলেন নেপালের উৎসব (১৯৫০)
নামক ম্যুরালটি । এরপর কিছুদিন বিহারের স্কুলে কাটিয়ে উপস্থিত হলেন দিল্লীতে।
বিহারে থাকবার সময় বামচোখে সমস্যা হচ্ছিল, দিল্লীতে ডাক্তার
দেখালেন এবং ১৯৫৭ সালে একমাত্র দৃশ্যমান চোখের অস্ত্রোপচার ও স্থায়ীভাবে
অন্ধত্বলাভ।
শান্তিনিকেতনে ফিরে এলেন ১৯৫৮ নাগাদ , সম্মুখীন হলেন এক নতুন অভিজ্ঞতায়। যোগ দিলেন কলাভবনে ... পড়াতেন শিল্প
ইতিহাস ও শিল্পতত্ত্ব। পঞ্চাশোর্ধ বয়সে সম্পূর্ণ দৃষ্টি হারালে মানুষ দিশাহারা হয়ে
পড়েন, ভেঙে পড়েন, কিন্তু বিনোদবিহারী
অন্য ধাতুতে গড়া। রঙ হারিয়েছে তো কি হয়েছে, ড্রইং করতেন
নিয়মিত। ছাত্র সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত তথ্যচিত্র The Inner Eye তে আমরা তার বিশদে বর্ণনা পাই। শিল্পী ড্রইংসিটের মাঝামাঝি Felt-pen
এর মুখবন্ধ ঢাকনা দিয়ে সামান্য কয়েকটি দাগ টেনে নিলেন। এই আঁচড়ের
স্পর্শে ছবির কেন্দ্রবিন্দু নির্মিত হল। এরপর বামহাতের আঙুলের স্পর্শে কাগজের
সীমারেখা নির্ধারণ করলেন শিল্পী ... কলমের আঁচড়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠল মনোজ্ঞ
রেখাচিত্রটি। অতীতের রেখাচিত্রের সঙ্গে এইপর্বের ফারাকটি লক্ষণীয়। অতীতের
রেখাচিত্রে রেখার আধিক্য এইপর্বে এসে নির্যাসে রূপান্তরিত হল, উন্মীলিত হল নতুন শিল্পদর্শণ ... অতিসরল অথচ চরম প্রজ্ঞাসমৃদ্ধ।
ডাক্তারের সৌজন্যতায় রঙ হারিয়ে গেছে, রঙিন ছবি আঁকতে পারছেন না বলে মোটেই থেমে থাকেন নি বিনোদবিহারী... উপায়
বের করলেন। ঠিক করলেন কোলাজ বানাবেন। প্রথমে জোগাড় করলেন রঙিন কাগজ, তারপর সেই কাগজগুলি কাটলেন ধারাল কোন অস্ত্র (সম্ভবত কাঁচি) দিয়ে। এতে
ধারগুলি তীক্ষ্ণ হল, হাতের আঙুলের স্পর্শে অনুভব করলেন সদ্য
সৃষ্ট আকারগুলি। এরপর মনের মাধুরী মিশিয়ে সেগুলিকে সাঁটলেন একফালি কাগজের উপর।
ধীরে ধীরে গড়ে উঠল ফলসহ নারী, জেলে/মেছুরে, চশমাসহ স্থির চিত্র,আশীর্বাদ, নেপালের
উৎসব, কুকুর, বিড়াল, ভেড়া, আধশোয়া লোকটি, মাছের
পুকুরসহ নিসর্গ থেকে বস্ত্রহরণ ... ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। শুধু ভারতবর্ষ কেন,
পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করলেন এক অভূতপূর্ব উদাহরণ। এই কোলাজ থেকেই
পরবর্তীকালে (১৯৭১-৭২) সৃষ্টি করলেন কলাভবনের ম্যুরাল ডিপার্টমেন্টের দেওয়ালে
অনবদ্য সেরামিক কাট-আউট ম্যুরাল। বিষয়টি অতি সুন্দরভাবে ধরেছেন সত্যজিৎ রায় তাঁর
নির্মিত তথ্যচিত্রে।
.
.
.
সেদিন সন্ধ্যায় কত্তামশাই একা ঘরে মস্ত একটা মোমের তালের
উপর আঙুল চালিয়ে চলেছেন। তিনি বেশ দেখতে
পাচ্ছেন একটা বেড়াল মোমের তালের মধ্যে গিয়ে ঢুকেছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই তাকে
খুঁজে পাচ্ছেন না। মোমের তালের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ক'রে কত্তামশাই
হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। এমন সময় বিড়ালের লেজটা তাঁর মুঠোর মধ্যে ধরা পড়ে গেল। এবার আর
বেড়াল পালাতে পারবে না। কত্তামশাই মহানন্দে বেড়ালের ঠ্যাং, মাথা,
ধড় সব টেনে বের করতে লাগলেন। বেড়ালের কান দুটো কোথায় গেল, এবার তাই সন্ধান করছেন কত্তামশাই। এমন সময় কত্তামশাইয়ের ধ্যান ভঙ্গ হল।
সারাজীবন ধরে রেখাচিত্র, রঙিন ছবি,
দেওয়ালচিত্র, কোলাজ এবং মোমের ভাস্কর্য করেছেন
অসংখ্য। অনুলেখকের সাহায্যে লিখেছেন 'চিত্রকর' নামক স্মৃতিকথা যার মধ্যে আছেন এই 'কত্তামশাই',
চরিত্রটি যে শিল্পী নিজেই সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। চিত্রকর
গ্রন্থটি পেয়েছেন রবীন্দ্রপুরস্কার। সারাজীবনের অন্যান্য শিল্পবিষয়ক রচনা নিয়ে 'চিত্রকথা' শীর্ষক সংকলন প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বভারতী
১৯৭৭ সালে বিনোদবিহারীকে সম্মানিত করেছেন 'দেশিকোত্তম'
ভূষণে। দেশে বিদেশে আজও অসংখ্য প্রদর্শনীতে সম্মানের সঙ্গে স্থান
পায় তাঁর শিল্পকর্ম। দেশের বিভিন্ন শহরে তাঁর জীবনব্যাপী কাজের প্রদর্শনী হয়েছে
একাধিকবার। শিল্পী হিসাবে বিনোদবিহারীর সফলতা নব্যভারতীয় শিল্পকলার সঙ্গে আধুনিক
পাশ্চাত্য ও অন্যান্য প্রাচ্যস্রোতগুলির সারাৎসার সংমিশ্রণে ভারতীয় বিশ্বদর্শনের
সঠিক পথের সন্ধান এবং সফল প্রতিপালন। সেই সঙ্গে একঝাঁক উত্তরাধিকার নির্বাচন যার
মধ্যে সদ্য প্রয়াত শিল্পী কে জি সুব্রক্ষ্মণ্যন অন্যতম। ব্যক্তিগত জীবনচর্চা এবং পূর্ণঅন্ধত্বপ্রাপ্তির
পরেও যে শিল্পচর্চা সম্ভব তার বোধহয় একমাত্র উদাহরণ তিনিই যা বর্তমান প্রজন্মকে
আজও উৎসাহিত করে চলেছেন।
.
.
.
একদিন সকালবেলায় কত্তামশাই পুতুল গড়ছিলেন, এমন সময় শাশ্বত সৃষ্টি ও অমর কীর্তি হাজির ... বললেন বর প্রার্থনা কর। কি
বর চাইবেন ভাববার আগেই কত্তামশাইয়ের জিভ দিয়ে বেড়িয়ে গেল 'গেট
আউট'।
... কিছু
পড়ে উপলব্ধি করলেন এদের বিদায় দিয়ে একটু দুঃখ করবার চেষ্টা করলাম কিন্তু তেমন দুঃখ
হচ্ছে না - পরিবর্তে বেশ হাল্কা মনে হচ্ছে নিজেকে।
অমিত বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর
২১/০৯/২০১৬
তথ্যসূত্র :
চিত্রকর / বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়
Benodebihari mukherjee a Centenary Retrospective Exhibition
catalogue / Gulammohammed Sheikh and R. Sive Kumar
Inner Eye, documentary film by Satyajit Roy
বিনোদবিহারীর চিত্রকথা / শান্তি নাথ
পশ্চিমবঙ্গের চিত্রকলায় ১৯৬০-এর দশক এবং দশজন শিল্পী /
মৃণাল ঘোষ
চিত্রচর্চা / ড. দেবাশিস ভট্টাচার্য
ব্যক্তিগত আলাপচারী : তারক গড়াই, সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, তপন কর্মকার, মৃণাল ঘোষ, শান্তি নাথ, সৌমিক
নন্দী মজুমদার, অনুপ এম জি, গৌরব রায়।
Banaras Ghats
১৯৪৩ সালে আঁকা ছবিটি এক জমজমাট সৌন্দর্য ব্যক্ত করে।
নেপালী কাগজের উপর টেম্পারায় আঁকা ছবিটির মূল উপপাদ্য হল মানুষের কর্ম ও আধাত্মিক
জীবনের সঙ্গে স্থাপত্য ও প্রকৃতির সম্পর্ক।
Boar
একটি বন্যশুকরের অভিব্যক্তি, কাঠখোদাই
সম্পর্কে যাদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা আছেন তারা জানেন কত কম রেখাতে নিঁখুত
অভিব্যক্তি ছাপানো সম্ভব। এটা সেরা নিদর্শন বলা যেতে পারে। সামান্য কয়েকটি নরুনের
আঁচড়ে শুকরটি সম্পূর্ণ। চোখে আর ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে সামান্য কাট কাট রেখা তার ক্রদ্ধ
রূপ পরিষ্কার ব্যক্ত করেছে। রচনা ১৯৪৪
সালে, সময়কালটি খেয়ালে রেখে উৎসমুখ খুঁজুন।
Curd seller 71
শিল্পীর অন্ধত্বপাপ্তির পর এই লিথোগ্রাফটির সৃষ্টি, রচনাকাল ১৯৭১। একটি চলমান দইওয়ালাকে অতি অল্পরেখা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন
শিল্পী। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ছবিতে ব্যবহৃত প্রতিটি রেখাই অন্তরমুখী, গতিমান থাকা স্বত্বেও কেউ ছুটে বেড়িয়ে যেতে চাইছে না। রূপকল্পের নির্যাসের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন বলা যেতে পারে এই ছাপাই
ছবিটিকে।
Green figure with table
১৯৬৯ সাল, পুরোপুরি অন্ধ শিল্পী, ডাক্তার অস্ত্রপোচার করে রঙ কেড়ে নেবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাতেও দমেন
নি শিল্পী। উপায় বার করলেন, ঠিক করলেন কাগজ কেটে রঙিন ছবি
আঁকবেন। একটি সাদা কাগজে পেনসিল দিয়ে ড্রইং করে তারপর কাঁচি জাতীয় ধারালো অস্ত্র
দিয়ে রঙিন কাগজে অভীষ্ট আকারগুলি (Form) কেটে নিয়ে ওই কাগজের
উপর সাঁটতেন। একটু খেয়াল করলে দেখবেন এগুলিকে শিল্পী কোলাজ (collage) না বলে, বলছেন পেপার কাট (paper-cut)। সঙ্গের রচনাটি শিল্পীর তিরিশ দশকে Man with lantern শিরোনামে
আঁকা ছবিটির পুননির্মাণ বললে কিছুমাত্র ভুল হবে না, লক্ষনীয়
এখানে শিল্পী নিজেকে এঁকেছেন চিরসবুজ রূপে।
Life of Medieval Saints
চল্লিশের দশকের প্রথমার্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, এইমধ্যে ১৯৪৩ মন্বন্তর ... ১৯৪৬ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ... এদেশের মানুষেরা
যেন সব ধরণের মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়েছিল ... পর পর ধাক্কায় আম-জনতা দিশা হারা ।
বিনোদবিহারী পরিকল্পনা করলেন এক ম্যুরালের যাতে থাকবে মনুষ্যত্বের জয়গান ... এক
পথের দিশা। বিশ্বভারতীর হিন্দীভবনের দেওয়ালে অনুমতি মিলল। শতাধিক রেখাচিত্র গড়লেন
পরিকল্পনাকালে। বিষয়বস্তু মধ্যযুগের সন্তরা। রুইদাস, গুরগোবিন্দ
সিং, কবীর, দাদু, তুলসীদাস ... আরো অনেকেই যারা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী থেকে উঠে এসেছে,
বলেছেন মানবপ্রেমের কথা, সহজ সরল বেঁচে থাকার
কথা। এনারা জাতপাত, ধর্মীয় ভেদাভেদ মানেন নি, উপেক্ষা করেছেন। শিল্পী এই সঙ্গে জুড়েছেন মানবের সনাতনী চরিত্র ...
স্তনদানে ব্যস্ত মা, নৌকার চলমান জীবন, ভজনরত মানুষ, কর্মরত মহিলা-পুরুষের দল ইত্যাদি।
দেখাতে চেয়েছেন মানুষ্যের কর্ম ও
আধ্যাত্মিক জীবন। হিন্দীভবনের সেন্ট্রাল হলে তিনটি দেওয়াল জুড়ে শিল্পী ছবিগুলি
এঁকেছেন কোনোপ্রকার tracing ছাড়াই, Fresco Buono পদ্ধতিতে।
পুরানোদিনের
দোতলা সমান উচ্চতা সম্পন্ন দেওয়ালে বাঁশ ও টিন দিয়ে ভারা বেঁধে দীর্ঘ একবছর ধরে
কাজ করেছেন এমন একজন শিল্পী যার একচোখ সম্পূর্ণ নষ্ট, অপর
চোখ আংশিক। সহকারী হিসাবে শিক্ষার্থী জিতেন্দ্রকুমার, লীলা (শিল্পীর
সহধর্মিনী), দেবকীনন্দন ও
কে জি সুব্রক্ষ্মণ্যন । কাজ চলার সময় শিল্পী ও তাঁর সহকারীরা একাধিকবার
ভারা থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় শিল্পীর একবন্ধু
অভিযোগ করে বলেছিল 'দেশের এই দুর্দিনে আপনার লজ্জা করে না
বসে বসে কাগজে রঙ লেপতে?' ... স্মিত হেসে শিল্পী সেকথা মেনে
নিয়েছিলে। আসলে শিল্পীর রঙ লেপা কাজটি এত সহজ সরল কুঁড়েমি জাতীয় কাজ নয়, এটি এক অন্যরকমের যুদ্ধক্ষেত্র যা দিয়ে শিল্পী জীবনের শাশ্বত দর্শণ
দর্শকদের উপহার দেন।
Man seated on a chair 1968
পুরোপুরি অন্ধ হবার পরেও শিল্পীর কাজ থেকে থাকে নি, অজস্র রেখাচিত্র করতেন। ছাত্র
সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত তথ্যচিত্র The Inner Eye তে আমরা তার
বিশদে বর্ণনা পাই। শিল্পী ড্রইংসিটের মাঝামাঝি Felt-pen এর
মুখবন্ধ ঢাকনা দিয়ে সামান্য কয়েকটি দাগ টেনে নিলেন। এই আঁচড়ের স্পর্শে ছবির
কেন্দ্রবিন্দু নির্মিত হল। এরপর বামহাতের আঙুলের স্পর্শে কাগজের সীমারেখা নির্ধারণ
করলেন শিল্পী ... কলমের আঁচড়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠল মনজ্ঞ রেখাচিত্রটি। অতীতের
রেখাচিত্রের সঙ্গে এইপর্বের ফারাকটি লক্ষনীয়। অতীগের রেখাচিত্রে রেখার আধিক্য
এইপর্বে এসে নির্যাসে রূপান্তরিত হল, উন্মীলিত হল নতুন শিল্পদর্শণ
... অতিসরল অথচ চরম প্রজ্ঞাসমৃদ্ধ।
Man with lantern
শিল্পী বিনোদবিহারী আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছেন বহুবার, কখন নন্দলাল রামকিংকরের সঙ্গে ,কখনো স্টুডিওতে একা
কর্মতর, কখন বা রেখাচিত্রে অথবা জলরঙের আঁচড়ে। এই ছবিটির
রচনা একটু স্বতন্ত্র। মাথার হাত দিয়ে কিছু
ভাবছেন শিল্পী, লন্ঠন ও খোলা জানালা দিয়ে বাহিরের গাঢ় রঙ সময়
সম্পর্কে নিশ্চিত করে। শিল্পী চেয়ারে বসে
আছেন, কিন্তু ছবির দিকে তাকালে মনে হবে একপায়ে বেশ
অদ্ভুতভাবে দাঁড়িয়ে। টেবিলের গঠন দেখলে বটতলার কাঠখোদাইয়ের মত একই ছবির বিভিন্ন
বস্তুর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে
অর্থাৎ টেবিলটি দেখানো হয়েছে বিহঙ্গম দৃষ্টি (Bird's-eye view)থেকে অথচ টেবিলে উপরে লন্ঠন, বই গ্লাস, জানালা, পায়া দেখানো হয়েছে দৃষ্টিপথের সমতল (Plain sight) থেকে। আবার দেহকান্ডটি উপর নিচে দুইবার দৃষ্টি ফেলে অনেকটা ক্যামেরার
প্যানরামা শর্টের মত তুলে জোড়া হয়েছে ... এর ফলে শরীরে এসেছে সামান্য
অস্বাভাবিকত্ব। তিরিশ দশকে কাগজের উপর টেম্পারায় আঁকা এই ছবিটি মোঘল হয়ে বটতলা
শৈলীকে বুঝে নিয়ে তার সঙ্গে পাশ্চাত্য অভিব্যক্তিবাদ মেশানোর সফল প্রচেষ্টা।
untitled
চিত্রপটে এক সারমেয় গরমে হাঁপাচ্ছে, চোখদুটি বন্ধ ... এই হলো বিষয়বস্তু। চিনাকালি, তুলি
ও পেনে আঁকা এই ছবিটি শিরোনাম হীন, তারিখহীন। তাহলে কেন এর
উপস্থিতি জরুরী এখানে ? মূল প্রবন্ধে আলোচিত বিনোদবিহারীর
উত্তরাধিকারের বীজ এই ছবিতে বর্তমান।
পরবর্তীকালে কে জি সুব্রক্ষ্মণ্যন, পার্থপ্রতিম দেব
প্রমুখ দিকপাল শিল্পী এর পুনঃনির্মাণ করেছেন।
Sadhu
দৃষ্টি হারিয়ে
শরীরের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলি আরো শক্তিশালী করে তুলেছিলেন বিনোদবিহারী। বিশেষ করে হাতের আঙুলগুলি। একদিন সামান্য মোমের গোলা পেয়েছিলেন, সম্ভবত সর্বক্ষণের ভৃত্য ছেলেটি জোগাড় করে দিয়েছিল। সেই গোলা থেকে
টিপেটুপে নির্মাণ হল নানা রকমের মূর্তি। তারমধ্যে এই সাধু অন্যতম। ভূমিতে উপবিষ্ট
সাধুটি বিশ্রামের ভঙ্গীতে বসে, ডানহাত হৃদয় স্পর্শ করে আছে।
মুখমন্ডল ভাবে নিমগ্ন। বিশ্রামাবস্থায়ও চেতনার ছুটি মেলে না, ইনি সাধু না শিল্পী ধন্দে পড়ে যাই আমরা। মূর্তিটির রচনাকাল ১৯৫৮ সাল।
Massage boy
ভূমিতে এক স্থূলকায় অর্ধনগ্ন ব্যক্তি বসে আছেন, মালুম হয় গৃহকর্তা। একটি শীর্ণকায় ভৃত্য তাঁর অঙ্গমর্দন করছে। চিত্রপটটির
বেশিরভাগ অংশই এখানে বাটালীদিয়ে কেটে সাদা বের করে আনা হয়েছে, শুধুমাত্র কালো মোটা রেখা দিয়ে
দেহের সীমানা, চোখ-নাক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ... রচনা
শৈলী অনেকটাই জার্মান অভিব্যক্তিবাদদের কথা মনে করায়। ১৯৪৪ সালে সৃষ্ট এই ছাপাই
ছবিটিতে সেইসময়ের অতিপরিচিত fruits of labor কে মূর্ত করেছেন
শিল্পী।
Sketch book
এটি শিল্পীকে অনুভব করবার একটি পথ। কালি-তুলিতে আঁকা এই
ছবিগুলি বীরভূমের গ্রামের মানুষজন, পশুপাখি, নিসর্গ সম্পর্কিত জীবন্ত দলিল বিশেষ। রচনাকাল ১৯৪২ সাল।
Still-life with key
ষাটের দশকের শেষের দিকে সৃষ্ট এই পেপার কাট -এর শিরোনাম Still-life with
key । রচনা পদ্ধতি একই। এখানে শিল্পী জ্যামিতিক
বিন্যাস নিয়ে খেলা করেছেন এবং সেইসঙ্গে রঙের নির্মাণ নিয়েও। মধ্যে মধ্যে ইংরাজি
কাগজের টুকরোও ব্যবহার করেছেন। অন্ধ হয়ে যাবার পরেও মনচক্ষুর দৃষ্টিতে রঙের রচনা
দেখলে বিস্ময় হতে হয়।
Tree Lover
একটি পলাশসদৃশ্য গাছের পাশে স্থূলকায় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে
আছেন,
পরণে পাজামা-পাঞ্চাবী। পাঞ্জাবীর উপর দিয়ে একটি চাদর দুই কাঁধের উপর
ছড়িয়ে আছে, পায়ে খড়ম। কাগজের উপর টেম্পারায় আঁকা ছবিটির
শিরোনাম Tree Lover, রচনাকাল ১৯৩২। পিছনের সবজে লালচে-বাদামী
রঙ বড় বেশিই নিঃসঙ্গ। বসন্তের আগমনে প্রেমউন্মাদনার বদলে মাঝবয়সী ব্যক্তিটি
প্রকৃতির মধ্যে প্রেম ছড়াতে ব্যস্ত। এক সফল ভারতীয় অভিব্যক্তিবাদি রচনা। মূল ছবিটি
দিল্লীর NGMA তে রক্ষিত আছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
ভাবা যায় না। দারুণ অনুপ্রেরণা পেলাম। অনেক ধন্যবাদ এরকম একটি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
ReplyDeleteঅসাধারন
ReplyDelete